সমাজের বিষবৃক্ষ ও অমৃতকুম্ভ দুইই মানুষের সৃষ্টি
ড:পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ,কলকাতা , ২৬ অক্টোবর ২০২০
বাঙালির সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব গুলির মধ্যে একটি,দুর্গোৎসবের, এবারের মতো আজ শেষদিন। ব্যতিক্রমী বছরে এই করোনা আবহেই এবার মানুষ আস্তে আস্তে কাজের ছন্দে ফিরবে।কেউ রোগের বিরুদ্ধে নিয়ম নীতি মেনে,কেউ বা নিয়ম নীতির পরোয়া না করেই।মানব সভ্যতায় সেই ইতিহাসের কাল থেকেই দু ধরণের মানসিকতার মানুষের বসবাস।একদল সমাজের মঙ্গলের কথা ভাবেন।এক দল নিজের মঙ্গলের কথা।ভাবনার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে উভয় তরফের লড়াইও আজকের নয়।
এবার এ উৎসব নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী,স্বাস্থ্য গবেষকই শুধু নয়,সমাজ সচেতন নাগরিক কুলের কপালেও ,শৃঙ্খলাহীনতার কারণে রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ছিলো।ভাবনাচিন্তাহীন আমোদ প্রিয় বেপরোয়া মানুষদের জনস্রোত রুখতে শেষমেশ বাধ্য হয়ে হাইকোর্টকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়, এবং নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে দিতে হয় উৎসবের যাপন কে।সরকারের তরফ থেকে আরো একটু তৎপরতা দেখানো গেলে হয়তো বল কোর্ট পর্যন্ত গড়ানো অবশ্যম্ভাবী ছিলো না।
এসবে জনস্রোত অথবা মানুষের চিন্তাহীন বলগাবিহীন আবেগকে পুরোটাই সংযত করা হয়তো যায়নি,কিন্তু একটা ব্যাপার পরিষ্কার বোঝা গেছে, মানব সভ্যতার স্রষ্টা এবং বিনাশক,দুই’ই মানুষ এবং তাঁদের শুভবুদ্ধি অথবা বুদ্ধিহীনতা এ ক্ষেত্রে সব থেকে বড় নির্ণায়ক বস্তু। মানুষের বেপরোয়া লাগাম ছাড়া উচ্ছ্বাসের কারণে বিপন্ন নাগরিকেরা আরো কত খানি বিপন্ন হবেন তা নিকট ভবিষ্যতের রোগ পরিসংখ্যানই বলবে।অত বড় বড় ব্যাপার নিয়ে কাটাছেঁড়া করার সঙ্গতি অথবা হিসেব পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের মতো স্বাধীন নাগরিক সত্তার না থাকলেও এই ব্যাপারটা প্রতিটি সচেতন নাগরিকের বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে যে পৃথিবীর ভালো মন্দ শুধুমাত্র কোনো হঠকারী গোষ্ঠীর কার্যকলাপেই নির্ধারিত হবে এসব মেনে নেওয়ার দিন শেষ।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকা সভ্যতায় সচেতন সভ্য মানুষের গলার স্বর ক্ষুদ্র স্বার্থবাদী আমোদপ্রিয়দের স্বরের তীব্রতাকে হার না মানালে মানব সভ্যতার ধ্বংসকে বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না। এখনকার এই বিপদ শুধুমাত্র একটি ছোট ইঙ্গিতবাহী।এখন থেকেই আমরা দায়িত্ব সচেতন না হলে সামনে আরো বড় বিপদ।অস্তিত্ববাদ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা সেই বিপন্নতার কথাই জানাচ্ছেন।
যেটুকু সামর্থ্য,সেটুকু নিয়েই আপনাদের স্মরণ করালাম নিজেদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা। ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন সবাই।মনে রাখবেন,আমাদের উত্তর পুরুষেরাও, আমরা তাঁদের বসবাসের জন্য এক সুস্থ পৃথিবী রেখে যাবো,আমাদের এই অঙ্গীকারে ভরসা রেখেই জন্মগ্রহণ করেছে।দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমাদের।সচেতন হতেই হবে।
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
২৬.১০.২০২০