“নব আনন্দে জাগো ,”…
ড:রঘুপতি সারেঙ্গী
প্রশ্নঃ ” কৈবার ঘর বদলতে হ্যায়,
কৈবার নিবাস বদলতে হ্যায়,
কৈবার রিষ্টে বদলতে হ্যায়,
ফির ভী পরিশান্ কিঁউ হ্যায়?”
একটা গল্প মনে পড়ছে। এক দম্পতি নতুন এক পাড়াতে এসে দোতলার এক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন।
সকালে উঠেই ভদ্রমহিলার চোখে পড়ে পাশের ফ্ল্যাটের লোক এদিকে গ্রিলে কাপড় মেলেছেন। কাপড়-চোপড়গুলো বেশ দামি; কিন্তু ঠিকমতো কাচা-ধোয়া হয় নি, হয়তো !
পরের দিন বারান্দাতে বেরোতেই একই দৃশ্য। বেশ দামি দামি সব পাঞ্জাবি, বেড-সিটগুলোও। কিন্তু
ভালো টি করে পরিস্কার করা হয় নি…… আসলে, কাজের মেয়েগুলো তো এখন এমনই কিনা !
এমনি করে যায় বেশ কিছুদিন। আবারও একদিন একই দৃশ্য চোখে পড়ায়, ভদ্রমহিলা ভদ্রলোককে ডেকে বললেন, ” তুমি একদিন বলছিলে না, ওই ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক তোমাদের একসময় কলিগ ছিলেন, বদলি হয়ে হুগলি গেছেন ?”
হ্যাঁ, তো……. ” তোমার হোল টা কী ? “
“না। হয় নি কিছু আমার। দেখা তো হয় তোমাদের মাঝে মধ্যে !”
“তো?”
বলছিলাম, ভদ্রলোকের স্ত্রী বোধহয় খুব casual!
Washing- machine টা যে নষ্ট হোয়ে গেছে
এ টুকুও লক্ষ্য রাখে না।
তোমায় আবার কে বললো? ওদের ওই মেয়েটাই কী আমাদের এখানেও কাজ করে ?
না তা নয়। আসলে, এখানে আসার পর থেকেই চোখে পড়ছে, বেশ দামি-দামি কাপড় চোপড় গুলো কেচে এদিকের রোদে টাঁগায়, অথচ একটিও পরিস্কার নয়। সব কেমন ছোপ-ছোপ। তেমন হলে ডিটারজেন্ট টা ও তো বদলে নিয়ে দেখতে পারে।
কর্তা সব চুপটি করে শুনে ……’হূঁ’ বলেই থামলেন।পরে বললে, ” দেখা হলে, না হয় একবার বলেই দেবো।”
দিন কয়েক পরেই ভদ্রমহিলা এক সকালে বারান্দায় বেরিয়েই কর্তাকে ডেকে বলছেন, ” ওই যে কী বলছিলে, মন্ডলদা না কী যেন, ওনার সাথে দেখা হোল কবে ?”
আরে ওই যে বলছিলে না, তোমাদের এক্স খলিগ,
ওনার কথাই বলছি।
কেন, ওনার সাথে তোমার কী ?
আমার আর কী হবে, আবার। নামটা ও তো তোমার থেকেই শোনা। চোখেও কী দেখেছি, কখনো?
বলছিলাম, হয় ডিটারজেন্টের ব্র্যান্ড টা এতদিনে
change করেছে, নয়তো Washing- machineটা সারিয়েছে … এতোদিনে ! আজকের ধোয়া কাপড়- চোপড়গুলো বেশ না ঝলমল করছে যেন।
বলি, দেখা হোল কবে? পুরনো অফিস কলিগ হোক আর যাই হোক, কোভিভ এর এ সময়ে ফ্ল্যাটে আবার আমন্ত্রন করো না যেন, এখন। সে পরে হবে খন।
হ্যাঁ গো, আমার কথাই বললে?
কতো যে সাবান আর সার্ফ নষ্ট করেছে ভদ্রমহিলা সেই জানে ! পয়সার হয়তো শেষ নেই !
এবার, হাল্কা করে মুখ খুললেন কর্তা। বললেন,আজ তোমার সকাল সাড়ে ৭ টাতে ওঠার আগেই, হাঁটতে না গিয়ে, আমাদের বারান্দার গ্লাশগুলো স্পিরিট দিয়ে ভালোটি করে ঘষে-ঘষে মুছলাম।
বাস্তবেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়। সমস্যার সূত্রপাত নিজের মনে হোলেও সমাধানের সূত্র খুঁজি আমরা বাইরে।
” ধুল চেহেরে পে থা
লেকিন্, আয়না সাফ্ কার্তা রহা।”
মুখের ময়লা সাফ্ না করে, আমরা আয়নাকে সাব করতেই সময় নষ্ট করি।
ভুলে গেলে চলবে না, এ ময়লা বাইরের ধুলো-বালি, ধোঁয়া-কাদা জমে হয় নি। মুখের এই মলীনতা আমাদের মনেরই আসল ছবি (Face is the index of Mind )। আয়না সাফ করে নয়..সাবান দিয়ে নয়, “এময়” ,”এম্ব্রে” বা “কেয়া শেঠ”এ ফেশ-ওয়াশ এর দ্বারাও এই ছোপ যাবার নয়। তাহলে চোখে-মুখে প্রশান্তির লালিমা আসবে কী করে?
আরবি এক শায়রি’র হিন্দী অনুবাদ বলছেঃ
” যো কাগজ কো ফুলোঁ মে খূশবু ঢুঁড় লেতে হ্যাঁয়,
ছোটে ছোটে চিজোঁ মে বড়া সুখ পাতে হ্যাঁয়,
যো আপনে পরিবার মে ফরিস্তে লুট্ লেতে হ্যাঁয়,
বহি লোক জিন্দেগি জিতে হ্যাঁয়।
বহি লোক জিন্দেগি জিতে হ্যাঁয়।”
…….. শরতের সিউলি বা বর্ষার মল্লিকাতে কলি
এলে সে সুগন্ধ সবাই পায় কিন্তু কাগজের ফুলে সুগন্ধ পায় ক’জন ? নোবেল, অস্কার নিদেন পক্ষে, রঞ্জি-ট্রফি পেলেও তো আনন্দ হয়ই হয়….. কিন্তু বিস্কুট দৌড়ে আপনার ভাইপো সেকেন্ড হোলে আপনি একই উচ্ছ্বাস দেখান কী? শালা-শালাবৌকে বাদ দিয়েও ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, ভাইপো-ভাইঝি দের নিয়ে নিজের বাড়িতেই হৈ-চৈ করার জন্য কিছু সময় জুটে কী আপনার ? কবে একটা নেমন্ত্রন চিঠি আসবে, আর আমরা সাজু-গুজু করে,জুতোয় পালিস লাগিয়ে আনন্দ করতে যাবো একটা ঘন্টার জন্য…..তাই কখনো হয় ? হয় না বলেই, নিজের বাড়ি বদলে, থাকার ফ্ল্যাট বদলে, স্টোন পরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে….” ফির ভী পরিসান” ই হচ্ছি আমরা। “চেহেরে মোহেরে দম্ হে, হাতো কাল কে তরফ্”….. পুরনো দিনের স্টিগমা গুলো জ্বল্-জ্বল্ করছে চোখে-মুখে।
আনন্দ যে কোনো কেনার বস্তু নয়…. ছোটো ছোটো ঘটনার মাঝে একে খুঁজে পেতে হয়। আর এই পাওয়াটা ও না আসলে এক ‘কলা’। প্রশ্ন হোল, আমি এর কলাকার হতে চাই কি না, হোতে জানি কি না, সে ও এক কথা ।
বুত পারাস্থি কে ইলজাম লাগানে ওয়ালে, ইয়ে নাহি জানতে মেরে মোহনকে পিছে মেরে ওজুদ খাড়া হ্যায় ।
বুত তো এক বাহানা থা, মোহন পেয়ারে মেরে দিল মে হ্যায়।~ সুমন মুন্সী
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.