৩০০ বছরের বলি প্রথা বন্ধের সিদ্ধান্ত ধর্মপুরের চৌধুরী পরিবারের
নীলাদ্রি শেখর মুখার্জী,দক্ষিন দিনাজপুর
কথায় আছে ‘ ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়’।
ঠিক সেটাই হলো। যে পূজার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মীরগ্রামে। দেশভাগের পর থেকে সেই পূজাই হয়ে আসছে কুমারগঞ্জ ব্লকের ধর্মপুর গ্রামে। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভারত – বাংলাদেশ অভিন্ন সম্পর্কের স্বাক্ষ্য বহনকারী আত্রেয়ী নদী। সারিবদ্ধ গাছ। গাছের ছায়া ঘেরা মনোরম পরিবেশে ভারী কুমারগঞ্জ ব্লকের ধর্মপুরের চৌধুরীদের। একসময়ের জমিদার হিসেবে পরিচিত হওয়া চৌধুরী পরিবারের এই পূজা অন্নদাপ্রসাদ চৌধুরী,সুধীর চন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে বর্তমানে মেজো ছেলে সনৎ কুমার চৌধুরীর দায়িত্বে। এই পূজা উপলক্ষ্যে কাটিহার,কলকাতা, বালুরঘাট থেকে বাড়ির মেয়ে, বোনরা উপস্থিত হয়। সবাই যেন প্রতিবার অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটার। যত্ন করে মাকে সাজানো হয়।
পরিপাটি করে সাজানো মায়ের ভোগে থাকে লুচি,পায়েস,সুজির,নারকেলের নাড়ুর সঙ্গে মাছের তরকারি এমনকি পোড়া সাটি মাছও। আনুমানিক ৩০০বছরের জাগ্রত এই কালী মায়ের পূজায় গতবার পাঠা বলির প্রস্তুতির সময় থেকেই সমস্যা হচ্ছিল। তখন থেকেই সুধীর বাবুর মনের মধ্যে একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিল পাঠা বলি বন্ধের। পরিবারের অন্য সদস্যরাও চাইতো না এই সময়ে বলি প্রথা চলুক। বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধিরা সেই ভাবনাকে সমর্থন করতেই সম্মিলিত ভাবে মন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ধর্মপুরের চৌধুরী পরিবার বন্ধ করে দিলো পাঠাবলি। এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই সুধীর চন্দ্র চৌধুরী জানান ‘গতবার থেকেই মনে হচ্ছিল মা বোধহয় নিজেই চাননা পাঠা বলি চলুক। তাই এবার সবাই মিলেই বন্ধ রাখলাম।’
পরিবারের সদস্য সুধীর বাবুর ছেলে মানিক চৌধুরী, ভাইপো সুকান্ত চৌধুরী , জামাই সুমিত চক্রবর্তী প্রমুখরা জানান ‘আমাদের ইচ্ছে ছিলনা পাঠা বলি হোক। তাই এই সিদ্ধান্ত। সবচাইতে ভাল লাগছে যে এবার কোনওরকম চিন্তা ছাড়াই সুন্দর ভাবেই মায়ের পূজা হয়েছে।’
বলি বন্ধের কথা শুনে আগ্রহভরে মাহিনগর থেকে পূজা দেখতে গিয়েছিলেন পার্থ মন্ডল।
তিনি জানান ‘পরিবারের সবাই মিলে একসাথে যেভাবে এই পূজা আয়োজন করছেন সেটা দেখে সত্যিই ভাল লাগলো। বলি বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এই চেতনা ধীরে ধীরে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক।’
আত্রেয়ী নদীর পাড় ধরে ফিরে আসার পথ ধরতেই রাস্তার ধারে সারি দেওয়া গাছের গায়ে হাওয়া খেলে গেলো যেনো! যেনো বলছে এভাবেই ছড়িয়ে পূজায় বলি বন্ধের বার্তা।