শিকড়
সুমন মুন্সী, কলকাতা
আমি থাকি মাটির নিচে অন্ধকারে।
দিনের আলো আমার জন্য নয়,
না তারা ভরা রাত, সেও আমার জন্য নয় ।
সবাই আমার ওপরটা দেখেই আমায় চেনে,
গোলাপ,জুঁই, বেল বা চন্দ্রমল্লিকা বলে ।
কেউ বা ফল দেখে বলে আম , জ্যাম লিচু বা কচু।
কিন্তু আমরা যারা মাটির নিচে থাকি,
এদের কে আমরাই প্রাণের রসদ যোগাই?
আমাদের সবার একটাই নাম, শিকড় ।
প্রতিদিন আমাদের আশায় সবাই জল ঢেলে দেয়,
ফুলের আশায়, ফলের আশায় মাঝে মাঝে সারও দেয়।
ভালোবাসায় নয়, শিকড় বাঁচলে তবেই তো ফুল ফল ধরবে,
এও এক ধান্দাবাজের চাল।
শিকড় কেটে নিলে গাছ বাঁচেনা,
তবুও মানুষ আগে শিকড়ই ছেঁটে ফেলে ।
মূর্খের মতো টবের ফুল হয়ে ড্রয়িং রুমে বাঁচে,
জীবনের থেকে পালিয়ে, জীবিকার অহংকারে বাঁচে ।
প্রথম বৃষ্টি বা শেষ রাতের ঝড়, মনের কোনায় আবেগের জল,
কিছুই আর দোলা দেয়না, শিকড় যে কেটে ফেলেছে সে,
কে দেবে তার মনের পাতায়,ফুলের রঙে নতুন বাহার?
শিকড়ের খোঁজে খুঁচাতে গিয়ে দেখো,
প্রাণের সন্ধানে সে ক্রমশ মাটির নিচেই তলিয়ে যায়,
যাতে তার আত্মজরা জীবন খুঁজে পায়।
প্রতিদিন শিকড়ের এই হারিয়ে যাওয়াতেই আনন্দ,
মাটির সাথে যোগ আছে বলেই,
শিকড়ের সন্ধানে আজও কিছু মানুষ ভেসে যায়, দূর বহু দূরে।
মিশির আলী বা মদনমোহন কিংবা আনন্দের মা সবাই কে আমি চিনি,
একটাই নাম তাঁদের শিকড় ।