বোল্লা কালীর পুজা অনুস্ঠিত হলো দক্ষিন দিনাজপুর জেলায়
নীলাদ্রি শেখর মুখার্জী, দক্ষিণ দিনাজপুর
করোনা পরিস্থিতিতেও গতবারের মতো এবারও উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বোল্লা কালীর পুজা অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ দিনাজপুরে। তবে তবে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলো মেলা ও পাঠা বলি। প্রতি বছর খুব জাঁকজমকভাবে এই বোল্লা পুজো হয়ে আসলেও গত দু’বছর থেকে করোনা পরিস্থিতির জন্য মেলা বন্ধ থাকছে বলে জানান পুজো কমিটির সদস্যরা।
একসময় এই কালীর নাম ছিল মড়কা কালী।পরবর্তীকালে এটি বোল্লা কালী নামে পরিচিত হয়।এবং স্হানটির নাম হয় বোল্লা।
জয় মা #বোল্লা_রক্ষাকালী মাতা:
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর শহর হলো বালুরঘাট। এই বালুরঘাট ব্লকের বোল্লা গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী পূজো হলো মা রক্ষাকালীর পুজো। যা বোল্লাকালী মাতার পুজো হিসেবেই সুপ্রসিদ্ধ। প্রত্যেক রাসপূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয় ও সোমবারে মায়ের বিসর্জন হয়। এছাড়াও প্রতি শুক্রবার , শনিবার ও মঙ্গলবারে মায়ের পুজো হয়। বাৎসরিক পুজো উপলক্ষে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় বিরাট মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলা উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যপূর্ণ। আমাদের রাজ্য, পাশের রাজ্য ও বাংলাদেশ থেকেও বহু ভক্ত ও দর্শনার্থী সমাগম হয় সেইসময়।
জনশ্রুতি আছে যে জনৈক তান্ত্রিক ব্যক্তি মায়ের স্বপ্নাদেশে পুকুর থেকে মায়ের শিলাময় রূপটি উদ্ধার করেন ও প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পূজা শুরু করেন। অনুমান সালটা ১৯২০। মা তখন থেকে রক্ষা কালী নামে পরিচিত হন। যদিও অনেকের মতে এই পুজো তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো। তখন ছোট করে পূজা হলেও উত্তরকালে পূজার বহর ও কলেবর বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এগারো ফুটের মাতৃমূর্তি পূজিত হন। কয়েক হাজার পাঁঠাবলি ও মহিষ বলি হয়। প্রায় ১৫ কেজি সোনার গহনায় মায়ের প্রতিমা সজ্জিত হয়। দু’কেজি সোনার বাজু বন্ধ মাকে পরানো হয়ে থাকে। বহু ভক্ত মানত করা ছোট ছোট কালী মূর্তিতে পূজা দেন ও বাতাসা নৈবেদ্য অর্পণ করেন। বল্লভ মুখোপাধ্যায় বলে কোনো জমিদারের নাম থেকে অঞ্চলটির নাম হয় বোল্লা। তাই বোল্লা গ্রামে অবস্থিত রক্ষা কালী মাতা ‘বোল্লা রক্ষা কালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ নামে ভক্ত মহলে সুপ্রসিদ্ধ।।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাসপূর্ণিমার পরের শুক্রবার অর্থাৎ গতকাল ২৬শে নভেম্বর , শুক্রবার উত্তরবঙ্গের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ও জাগ্রত এই রক্ষা কালী মায়ের বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এই বছর ভক্ত সমাগম, ভোগ নিবেদন, মানদ পুজো, বলি ও সর্বোপরি মায়ের দর্শন নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
গতকাল থেকে এই পুজো শুরু হয়ে শেষ হবে রবিবার। অর্থাৎ তিন দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই পুজো। সোমবার দিন এই প্রতিমা ভাসানো হয় স্থানীয় একটি পুকুরে।এই ভাষাণকে ঘিরেও অনেক রকম লোকশ্রুতি শোনা যায়।
এবারের মেলায় প্রচুর জনসমাগম হয়।