
ঐতিহাসিক ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশকে ভুটান ও ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি স্মরণে স্মারকডাকটিকেট অবমুক্ত করলেন বাংলাদেশ
পররাষ্ট্র মন্ত্রী
আইবিজি নিউজ ভারত,বাংলাদেশ বিশেষ সংবাদদাতা আনোয়ারুল হক ভুঁইয়া
ঢাকা ৬ ডিসেম্বর:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ৬ ডিসেম্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের সূচনা হয়েছিল। ডাক অধিদপ্তর এ উপলক্ষে ১০ (দশ) টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকেট, ১০ (দশ) টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম, ৫ (পাঁচ) টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড অবমুক্ত ও একটি বিশেষ সীলমোহর প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন এবং ডাটাকার্ড প্রকাশ করেন। এ সময় একটি বিশেষ সীলমোহর ব্যবহার করা হয়।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার ও একই বিভাগের সচিব জনাব মোঃ খলিলুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ডাক টিকেট অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েন্টশিল, সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতৃবৃন্দ।
৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি স্মরণে স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত উপলক্ষ্যে মন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বিবৃতিতে ভুটান এবং ভারত কর্তৃক স্বাধীনতার পূর্বেই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতিকে স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, ভুটান ও ভারতের পথপ্রদর্শনমূলক ও অগ্রবর্তী স্বীকৃতিকে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি মহত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তৎকালীন ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখী হতে হয় বাংলাদেশকে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুর সুদৃঢ় নেতৃত্বের ফসল হিসেবে ১৯৭২ এর জানুয়ারি মাসেই পূর্ব জার্মানি, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল, সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বীকৃতি দেয়।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যসহ সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। পৃথিবীর অনেক দেশ স্বাধীনতার আন্দোলন করছে কিন্তু তাদের একজন বঙ্গবন্ধু নেই বলে সফল হতে পারেনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী কোন আন্দোলন ছিল না। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে এটিকে জনযুদ্ধে রূপান্তর করছিলেন বলেই ভারত পাশে দাঁড়িয়েছিলো। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

সেক্টর কমান্ডার ফোরামের আলোচনা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এর আগে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে সেক্টর কমান্ডার ফোরাম আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রথম স্বীকৃতির পঞ্চাশ বছর শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানের আগ্রাসনের কারণে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর ভারত ও ভুটানের স্বীকৃতির ফলে যুদ্ধটা ভারত- পাকিস্তান নয়,যুদ্ধটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত হয় এবং ভারত যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সহায়তা করছে সে বিষয়টিই আন্তর্জাতিক পরিমনণ্ডলে উঠে আসে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ঘটনাবহুল বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপনা করে বলেন, ভারতের অনেক বীর সেনানীর রক্ত আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাংলার এ মাটিতে মিশে আছে। তিনি ভারত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে রক্তের সম্পর্ক হিসেবে উল্লেখ করেন।
ভারতের হাইকমিশনার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, এদেশের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সহজ হতো না।
ভুটানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ভুটানের সম্পর্কের ৫০ বছরকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন এবং আগামী দিনগুলোতে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব ঐতিহাসিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য এরোমা দত্তসহ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
পরে ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী অতিথিবৃন্দকে মুজিব জন্মশতবর্ষে ডাক অধিদপ্তর প্রকাশিত শত ডাকটিকেটের এলবাম উপহার প্রদান করে।