আপনি ও তাঁরা – কিছু কথা কিছু অনুভূতি কিছু সহানুভূতি
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
আপনার বাড়িতে বয়স্ক বাবা মা বা নিকটাত্মীয় আছেন? বয়স্ক মানে কষ্ট করে ধীরে ধীরে হাঁটেন, সব কিছু ভুলে যান, কানে কম শোনেন, চোখে কম দেখেন? ঘুম কম, বোঝেন কম,বিদ্রুপ করলে হাসেন, ভালোবাসলে কাঁদেন? আছেন এমন মানুষেরা? আপনি বয়স্ক নন, আপনার ইন্দ্রিয়গুলো সজাগ, নিজের ভালোমন্দ সম্পর্কে আপনার টনটনে জ্ঞান, ঘরদোর ঝকঝকে, বিছানা টানটান না হলে আপনি রাগ করেন,তাঁরা বাথরুমে ঝাঁঝালো গন্ধ করলে আপনি লঙ্কাকান্ড করেন।
একটা কথা বলি।আপনার আপনি থাকা এবং তাঁদের তাঁরা হওয়া দুটোই কিন্তু স্বাভাবিক।
কারণ আপনাকে প্রতিটি জিনিস লড়ে আর বুঝে নিতে হবে পৃথিবী থেকে। ততদিন যতদিন আপনার শরীর ও মন দেয়। তারপর আপনিও হাল ছাড়বেন যেমন আজকে ওনারা ছেড়েছেন। ছেড়েছেন ওদের শরীর ও মনের বয়স হয়েছে বলে। ওরা পা বাড়িয়ে আছেন বলে। চলে গেলে কেউ আর ফেরেন না। বয়স এমন একটা জিনিস যা কাউকে ছাড়ে না। কেউ মুক্তি পান না তার থাবা থেকে। কেউ কিছুদিন পরে। কেউ আগে। মোবাইলের যেমন সিম রেজিস্ট্রেশন ফেল করে একটা সময়ের পর থেকে, তেমন মানুষের প্রতিটি সিস্টেম ও প্রতিটি কোষ একটা সময়ের পর থেকে বিকল, অকেজো ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে শুরু করে, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে এজিং। এজিং বৃদ্ধ মানুষের সব আচরণ, সব কাজ, সব স্বভাব নিয়ন্ত্রণ করে। সব অসংলগ্নতাকে সাপোর্ট করে। কোনও কিছু তাঁর বশে থাকে না।
এ তথ্যটা প্লিজ মাথায় রাখুন। তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন না। তাঁদের অনুকম্পার পাত্র ভাববেন না। উপেক্ষা করবেন না। সব অনুভূতি চলে গেলেও কিন্তু মনে মনে কষ্ট বা আনন্দ পাওয়ার অনুভূতি তাঁদের যায় না। হতেই পারে তাঁদের কেউ কেউ কম বয়স থেকেই প্রকৃতিগত বা জিনগত ভাবে অসংলগ্ন, কাছাখোলা, তালকানা দুর্বিনীত বা খারাপ মানুষ ছিলেন। তবুও। তবুও এখনও পর্যন্ত শরীর ও মনে তরতাজা আপনার দায়িত্ব তাঁদের দায়িত্বের তুলনায় বেশি।
একেবারে না পারলে বরং তাঁদের নিজেদের দায়িত্বে ভালো বৃদ্ধাশ্রমে দিন। তার খরচ যোগান। যেভাবে ছোটবেলায় তাঁরা আপনাকে স্কুলে দিয়েছিলেন।
আর একটা কথা। বস্তুর থেকে ব্যক্তি বেশি ভালোবাসুন। ব্যক্তি বস্তু আনে। বস্তু ব্যক্তি নয়। সুতরাং ব্যক্তির ভালো থাকা বেশি জরুরি। সুপ্রভাত।