এখনো মানুষ মরেনি – বিনা পয়সার শিক্ষকদের এক জায়গায় করার লড়াই বিলেত ফেরত শিক্ষকের
সুমন মুন্সী, কলকাতা
এক আজব পাগলামী আমাদের কাজ বাড়ির খেয়ে বোনের মোষ তাড়াই না আমরা মানুষ গড়ার কারিগর খুঁজি দেশ জুড়ে, অরূপ মিত্র মাঠে থেকে খুঁজে আনেন সেই সব বিরল মানবিক গুন্ সম্পন্ন ছেলে মেয়েদের যারা বিনি পয়সায় আগামী প্রজন্ম কে শেখাতে চায় অঙ্ক , বিজ্ঞান সাহিত্য আরো অনেক কিছু।
অরূপের কথা আগেও বলেছি বিলেত ফেরত অংকের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেশা দেশ গড়া আর আমার কাজ সেই সব কথা আপনাদের জানা। আজ থেকে ৩০ বছর আগে এই কাজই করতাম বাংলা জুড়ে বিষয় ছিল কম্পিউটার । তাই এই ভাইয়ের স্বপ্নের সাথে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা গুলোকে দেখতে পাই, দেশ গড়তে হলে শিক্ষিত মানুষ চাই ।
আজ ভাই গেছেন সুন্দরবন তাঁরই ফেসবুক ওয়াল থেকে তাঁর লেখায় আপনাদের জানাই মানুষ এখনো আছে শুধু খুঁজে নেয়ার মানুষ কম।
অরূপের সাথে আসুন সবাই হাত মেলায় আর নেতাজি সুভাষের দেশ , ঈস্বরচন্দ্রের দেশ , রামমোহনের দেশ আবার বিশ্ব সভায় গর্বের সাথে মাথা তুলে ধরুক । হাতে থাক দেশের পতাকা কোনো চালিয়াতি করা আদর্শহীন দলের নয়।
পরবর্তী লেখাটি অরূপ মিত্র মহাশয়ের ফেসবুক ওয়াল থেকে অনুমতি সহ তুলে ধরা হলো।
শিক্ষকের খোঁজে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম কলিনগরে গিয়েছিলাম।এখনো দাঁড়িয়ে আছি সুন্দরবোনের সবুজ গাছের মধ্যে।পিছন থেকে একটা ডাক কানে ভেসে উঠলো দাদা আমি সত্যব্রত।আমি বললাম তুমি কে ভাই।সে বলে উঠলো আমি এক ফুচকা ওয়ালা।আমি বললাম তুমি কি আমাকে চেনো। ও বললো না দাদা।তবে এখনকার কিছু ছেলে আমাকে খবর দিলো যে আপনি এসেছেন।তাই এলাম দাদা।আপনি তো সেই শিক্ষকদের খুঁজজেন যারা বিনা পারিশ্রমিকে অনাথ অসহায় ছেলেদের পড়াবেন।আমি বললাম হ্যা।
ভাই টি বললো দাদা আমি এই গ্রামের মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় ফুচকা বিক্রি করি ।আমি ম্যাথ নিয়ে এম. এস.সি করেছি। বি. এড কমপ্লিট করেছি।স্কুল টিচার হওয়ার স্বপ্ন ছিল।কিন্তু এখনও হতে পারিনি।বাড়ির সংসার চলে না দাদা।বাবা চাষ করতেন।এখন শরীর টা খুব খারাপ বাবার।এখন ওনার দম লাগে।বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার মতো দুটো বোন আছে।তাই সংসার আর টানা যাচ্ছে না।তাই বেরিয়ে পড়লাম ফুচকার গাড়ি নিয়ে।তবে সারাদিন কাজ করে বাড়িতে ফিরে পড়াই।আমার গ্রামের অনেক অনেক ছোট ছেলে মেয়ে আছে যারা বিভিন্ন ভাঁটা তে কাজ করে।আবার অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা নদীতে মাছ ধরে।তাদের পড়ার জন্য সেইরকম কোনো অর্থ নেই দাদা।তাদের কে আমি বিনামূল্যে পড়াই।অনেকের বই খাতা কেনার ক্ষমতা নেই দাদা, তাদের জন্য এখানকার কিছু ধনী ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ চেয়ে নিয়ে এসে কিনে দি।
কথাগুলো শুনে মনে হলো সত্যি এই গ্রাম আমার স্বর্গ ।কোথায় এক ছোট্ট গ্রাম যেখানে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেই অন্ধকারের বুকে দাড়িয়ে আমারই একটা ছোট ভাই প্রতিটা সেকেন্ডে গ্রামে আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে।মনে মনে বললাম মহান তুমি ভাই।মহান তোমার কাজ।তুমি তো একটা হীরে। সত্যি তোমার নাম সার্থক সত্যব্রত।ভালো থেকো ভাই।এইভাবেই তোমার গ্রামের উপকার করে যেও।
অরূপের এই চেষ্টায় স্বয়ং মা স্বরসতী সাহায্য করুন জাতি ধর্ম বর্ণ কোনো ভেদ না করে আগুনের পরশমনি জ্বলুক প্রাণে।