” জাহ্ণবী “
ড: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী|
রাত্রি তখন দ্বিপ্রহর।
নেশা তুর দুচোখে সময়ও খানিকটা বেসামাল।
ফাঁকা হাইওয়ে ধরে ছুটে চলা কাল মার্সিডিস খানা,
হাড়ে মজ্জায় তার ভরপুর বজ্জাতি, চোখে বারুদ আর –
শিরা ধমনীতে বইছে নিশি যাপনের উত্তুঙ্গ মস্তানি।
আকণ্ঠ নেশায় জড়ানো চোখ,
তবু কিসের তৃষ্ণায় মন এখনো অশান্ত।
ধরা দিয়েও তা রয়েছে অধরা
চলছে লুকোচুরি খেলা।
হঠাৎ করে রাস্তার পাশে মিলে গেল আমার ক্ষুন্নিবৃত্তির উপাচার।
অসহায় একটি মেয়ে, তদুপরি অসহায় এক বৃদ্ধ।
কোন মাঝরাতের সওয়ারির অপেক্ষায়, –
একদম একাকী।
আমার দু চোখ উঠল জ্বলে -লোভে ।
মস্তিষ্ক জানান দিল, “এই তো সেই ।যার অপেক্ষায়
আমার মত হায়নারা হানা দেয় মাঝরাতে রাজপথে।”
চাকার গতি থামলে বুঝলাম মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা ।
তাতে কি ? – আমার তো শুধু শরীর চাই,
বাকি দায়িত্ব তো শকুনের ।
তাই তুলে নিলাম গাড়িতে। জোর করে ।
যেমন করে সীতাকে হরণ করেছিল রাবণ-
ঠিক সেই ভাবে, ফাঁকি দিয়ে।
পেছনে পড়ে থাকা অসহায় পিতার আর্তনাদ,
আমার কাছে তখন হাসির খোরাক।
আমার গাড়ি এখন পক্ষীরাজের ঘোড়া ছুটে চলেছে
কোন অজানা দ্বীপের খোঁজে। যেখানে,
যেখানে নিশ্চিন্তে ছিড়ে খাওয়া যাবে অসহায় এই প্রাণীটিকে।
আর শব্দ? – সে তো চাপা পড়বে এই আরবান অরন্যে।
স্থান, কাল, পাত্র – তিনজনই এখন নাটকের শেষ অংকের অপেক্ষায়।
কিন্তু আমার পৌরুষত্ব যখন কোমরের বেল্টে এসে থেকেছে, ঠিক, ঠিক তখনই ঘটল সেই আশ্চর্য ঘটনাটা –
যা এক মুহূর্তে নাড়িয়ে দিলেও আমার সকল সত্তাকে।
মেয়েটির শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো আরেকটি মানবী।
তার তীব্র সীৎকারে থমকে গেল আমার সমস্ত মূঢ়তা।
তাকে পেয়ে যন্ত্রণাটা তোর মেয়েটির মুখেও সে কি তৃপ্তির হাসি।
সে হাসি যেন চাবুক মারলো আমার গোটা শরীরে,
আমার চেতনায়, আমার বিবেকে।
চোখের সামনে ভেসে উঠলো আরেকটি নারীর মুখ – আমার মা।
ততক্ষণে আমার নেশা গিয়েছে ছুটে।
আমার অঙ্কশায়িনী আমারই হাতে তুলে দিয়ে,
স্মিত হেসে কাটালো এ পৃথিবীর মায়া।
রক্তরস মাখা একরত্তি এই প্রাণীটি এখন আমার কোলে।
স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তার দিকে।
কচি হাত দুটো এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা।
অশ্রু মাখা চোখে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।
আঁকড়ে ধরলাম নিজের বুকে।
অনুভব করলাম আমি যেন ক্রমশ রত্নাকর থেকে বাল্মিকী হয়ে উঠছি।
তার কপালে দিলাম আলতো চুমু,
মাথায় রাখলাম হাত।
তারপর কানে মুখ লাগিয়ে বললাম –
আজ থেকে আমিই তোর জনক, আর তুই আমার – জাহ্ণবী।
BRC, 29.09.2022