বাংলার তরুণ চলচ্চিত্র প্রতিভা কোরক মিশ্র
By শ্রীজাতা সাহা সাহু
চলচ্চিত্র সম্পাদনার কাজটি রীতি মতো শ্রম-সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। কারণ, সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তিনটি বিভিন্ন পর্যায়। যেমন – রাফ কাট, ডিরেক্টর্স কাট এবং ফাইনাল কাট। অর্থাৎ, প্রাথমিকভাবে নির্মিত চলচ্চিত্র থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া, চলচ্চিত্র পরিচালকের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ চিত্রটি দেখার পর প্রয়োজনবোধে কিছু অংশ কাটছাঁট করা এবং পরিশেষে চূড়ান্ত পর্যায়ের যা কিছু বাদ দেওয়ার কাজ শেষ করে সম্পাদনার কাজটিকে সম্পূর্ণ করা। এরপরই সেই চলচ্চিত্রটিকে হলে দেখানোর উপযোগী বলে সিলমোহর দেওয়া হয়। নির্মিত ছবিটির গুণগতমান অক্ষুণ্ন রেখে তার ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে তা নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট ছবিটির চিত্র সম্পাদক ও নির্দেশক অর্থাৎ পরিচালক। এই কাজগুলিতে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছেন কলকাতার কোরক মিশ্র। আগামী দিনের “৭৫টি সৃজনশীল প্রতিভার” অন্যতম রূপে তিনি চিহ্নিত হয়েছেন। ১৮-৩৫ বছর বয়সী ৭৫ জন চলচ্চিত্র প্রতিভাকে এইভাবেই সম্মান সূচক আখ্যা দেওয়া হয়েছে ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।
কোরক মিশ্রর ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড হিজ প্যাশন’ ছবিটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে এবারের উৎসবের জন্য।
এই ৭৫ জন সৃজনশীল প্রতিভাকে বেছে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, গ্র্যামি এবং অস্কার বিজয়ী কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নিয়ে গঠিত এক বিচারক মণ্ডলী। লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত ব্যক্তিদেরও রাখা হয়েছিল এই নির্বাচক মণ্ডলীতে। এঁরা হলেন – প্রসূন যোশী, রেসুল পুকুট্টি, আর বালকি, ঋকি কেজ, মালা দে বান্থিয়া, গৌতমী তারিমাল্লা, বাল্লু সালুজা, মঞ্জল শ্রফ, নরেন্দ্র রেথুলিকর এবং রবি কে চন্দ্রন।
কোরক মিশ্র তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। পরে, ২০২২ – এর মার্চ থেকে তিনি চলচ্চিত্র ও ভিডিও সম্পাদনার কাজে নেমে পড়েন পুরোপুরিভাবে। বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র এবং স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিও তিনি সম্পাদনা করেছেন। কোভিডজনিত পরিস্থিতিতে লকডাউনকালে তাঁর সম্পাদিত ‘আনডিভাইডেড সলিচিউড’ ছবিটি প্রসার ভারতীর ‘ফিল্ম চ্যালেঞ্জ ২০২০-২১’ – এর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কারের সম্মান অর্জন করে। এই ছবিটির সাউন্ড অর্থাৎ ধ্বনি আবহের কাজটিও তাঁর নিজের হাতে করা। হ্যাবিট্যাট ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং এলআইএইচএস আর্বান লেন্স ফিল্ম ফেস্টিভালের মতো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে কোরক মিশ্রের এই ছবিটি প্রদর্শিত হয়। প্রসার ভারতীর পক্ষ থেকে তাঁর কাজের প্রশংসা করে বলা হয়েছে যে, “সবকিছুর মধ্যেই একটা ভালো কিছু করে দেখানোর আবেগ ও প্রবণতা কাজ করে। আর এইভাবেই পাদপ্রদীপের আলোয় নিজেকে তুলে ধরা সম্ভব হয়। কোরক মিশ্র যা বিশ্বাস করেন, তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে এক বড় প্রেক্ষাপটে তিনি তা তুলে ধরেন”।
লেখিকা : মিডিয়া অ্যান্ড কম্যুনিকেশন অফিসার, পিআইবি, কলকাতা