বাংলাদেশে দুর্গাপুজোয় বাজনা ও মাইক বাজানোর উপর ফতোয়া কেন? প্রশ্ন করলেন দুই বাংলার প্রিয় কবি অমিত গোস্বামী
সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামিক কট্টরপন্থীদের ফতোয়া দুর্গাপূজা ঘিরে আবার চিন্তার কারণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের মনে ।
এই বিষয়ে কবি অমিত গোস্বামী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজ যা বললেন তা এক সময়ের দলিল তাঁর অনুমতি সপক্ষে প্রকাশ করা হলো । কবির ব্যক্তিগত মত হলেও ইহা সকলের বিবেচনার বিষয় ।
What he wrote:
বাংলাদেশের দুর্গাপুজোয় বাজনা ও মাইক বাজানোর উপর নাকি ফতোয়া জারি করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন । রবিবার (১৬ অক্টোবর ২০২৩) জারি করা ওই ফতোয়ায় নাকি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে আযান ও নামাজের সময় পূজামন্ডপে বাদ্যযন্ত্র ও মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে । সরকারও নাকি এই নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী।
হিন্দুদের পুজোপাঠ এমনিতেই বেশ জোরালো, শব্দময়। মুসলমানদের মধ্যেও আজানে তারস্বরে মাইক ব্যবহার কম নয়। বাড়ছে পাড়ায় পাড়ায় রাতভর গোটা গ্রাম জাগিয়ে জলসা (ধর্মীয় প্রবচনের আয়োজন)। এ নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিবাদ, এমনকী দাঙ্গাও কম হয়নি। যত সাম্প্রদায়িক বিবাদ হয়েছে তার বেশির ভাগের উৎস ধর্মস্থানে মাইকের চিৎকার।
আযানে (নামাজের জন্য আহ্বান) লাউডস্পিকারের ব্যবহার জায়েজ না নাজায়েজ, তাই নিয়ে মুসলমান সমাজে আলেমদের মধ্যে আজও মতভেদ রয়েছে। বিরোধীদের যুক্তি, মানুষের কথা তড়িৎবাহিত হয়ে মাইকের মাধ্যমে যখন শোনা যায়, তখন সেটা মানুষের প্রকৃত কণ্ঠস্বর নয়, যন্ত্রের আওয়াজ। বিরোধী আলেমদের সে আপত্তি ধোপে টেকেনি।
এই কথা সত্যি যে কোনও ধর্মেরই অধিকার নেই হট্টগোল করে অন্যকে বিরক্ত করার— সে আযানই হোক বা পুজোপাঠ। কিন্তু তার চেয়েও বড় অন্যায় এভাবে ফতোয়া জারি করা। ডাক্তারি বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত নটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করা অনুচিৎ। ভারতে এখন এই বিধিমালা প্রযোজ্য। কিন্তু মানে ক’জন! তাই পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতেই হয়।
ঢাকের আওয়াজ বেশিদূর যায় না যদি না সেটা লাউডস্পিকারবাহিত হয়। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে কোন ধর্মীয় সংগঠন সংখ্যালঘুদের ওপরে ফতোয়া জারি করবে সেটা সরকারের সহ্য করা প্রশাসনিক দুর্বলতা বা সংখ্যাগুরুদের প্রতি পক্ষপাত। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিধিমালা বলবৎ করাই সুশাসনের উদাহরণ হতে পারে।