নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবমাননার শিকার সহ-উপাচার্য, কাঠগড়ায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
সংবাদদাতা:
চরম অবমাননা ও অসহযোগিতার অভিযোগ উঠল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শংকর কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে। সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই অবমাননা ও অসহযোগিতা তারই সহকর্মী সহ-উপাচার্যের সঙ্গে। অবশ্য এ বিষয়ে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম পাল মুখ খুলতে নারাজ।
রাজ্যপাল দফতর থেকে এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সহ-উপাচার্যের সুযোগ সুবিধা এবং কাজ সম্পর্কে এক নির্দেশাবলী পাঠানো হয়েছে। একজন উপাচার্যের মতোই সমস্ত ধরনের পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধার দাবিদার সহ-উপাচার্য। অথচ রাজভবন থেকে নিয়োগ দেওয়ার পর এক মাস অতিক্রান্ত হবার পরেও সহ-উপাচার্য তাঁর সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
অধ্যাপক গৌতম পাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে এ বিষয়ে জানালেও তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিয়মমাফিক পৃথক বাসভবন এবং যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে সহ-উপাচার্যের জন্য। পাশাপাশি উপাচার্যের মতোই সমস্ত ধরনের পরিকাঠামো পাওয়ার কথা সহ-উপাচার্যের।
অথচ মাস ঘুরে গেলেও চরমভাবে অসহযোগিতা করা হচ্ছে সহ-উপাচার্যের সঙ্গে। তাই স্বভাবতই তার দফতরের যে সমস্ত কর্মপ্রণালী তা ব্যাহত হচ্ছে।
সহ-উপাচার্যের জন্য পৃথক বাসভবন, যাতায়াতের জন্য জন্য উপযুক্ত যানবাহন, অফিশিয়াল কাজকর্ম পরিচালনার জন্য উপাচার্যের মতই সমস্ত ধরনের পরিকাঠামো ইত্যাদি পাওয়ার কথা তাঁর। অথচ অধ্যাপক পালের জন্য কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এখনো অব্দি তা বরাদ্দ করা হয়নি।
আর এখানেই কর্তৃপক্ষের উপর প্রশ্ন উঠছে চরমভাবে অবমাননা ও অসহযোগিতা করার। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, সহ উপাচার্যকে এই অবমাননা এখানেই থেমে থাকেনি। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যাওয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমে পদাধিকার বলেই তিনি সেখানকার মেম্বার। সদ্য সমাপ্ত সামার ইন্টার্নকোর্সের আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকেও তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই চরম অপমান ও অবমাননার বিশেষ মাত্রা লক্ষ করা গেছে ন্যাক অ্যাক্রিডিটেশন বিষয়ক দুই দিবসীয় সচেতনতা মূলক আলোচনা চক্রকে কেন্দ্র করে। এই আলোচনা চক্রের যে কোর কমিটি সেখানে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠরা স্থান পেলেও নাম রাখা হয়নি সহ-উপাচার্যের। অথচ পদাধিকার বলে স্বাভাবিকভাবেই সহ-উপাচার্যের নাম থাকা বাধ্যতামূলক। আর এখানেই অভিযোগের তীর যার দিকে তিনি হলেন উপাচার্য শংকর কুমার ঘোষ। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, একদা বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ডীন হিসাবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রশাসনিক কাজকর্ম সামলেছেন অধ্যাপক গৌতম পাল। আর হঠাৎ করেই উচ্চ শিক্ষা দফতরের সার্চ কমিটির নির্দেশে এবং রাজভবনের সহ-উপাচার্য নিয়োগে খুশি হতে পারেননি বর্তমান উপাচার্য। আর এখানেই বিবাদমান দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব সামনে উঠে এসেছে। সহ-উপাচার্যকে অসহযোগিতা করা এবং অবমাননা করার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের অভিসন্ধি আছে বলে প্রকাশ্যে এসেছে। সহ-উপচার্যকে গাড়ি দেওয়া হয়নি বলে তিনি বর্তমানে কল্যাণী থেকে কলকাতা যাতায়াত করছেন টোটো ও ট্রেনে করে। মেলেনি তার আবাস ভবন ও অফিশিয়াল কাজকর্ম চালানোর জন্য অন্যান্য পরিকাঠামো। অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে সহ-উপাচার্যের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে জানিয়েছি, যা করার কর্তৃপক্ষই করবে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় অধ্যাপক গৌতম পালকে গত ১৮ জুন মাসে। অধ্যাপক ড. গৌতম পাল বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা বিভাগের স্বনাম খ্যাত শিক্ষক এবং বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডিন।
তিনি একজন অসাধারণ শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী। শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও লেখক হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে গোটা বিশ্বব্যাপী।
দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণ এবং গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর অধীনে বহু স্নাতকোত্তর এবং পিএচ. ডি. স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা গবেষণা করে ভারতবর্ষ এবং বিদেশের কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানজনক পদে আসীন হয়েছেন। সেই সঙ্গে সমান্তরালভাবে সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর গবেষণার কাজ ও লেখালিখি। তাঁর স্নেহধন্য অনেক ছাত্র এবং গবেষক সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় আজ সাফল্যের সঙ্গে কৃতিত্বের ছাপ রাখেছেন প্রতিনিয়ত। তাঁর প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় ১৩৩ টি এবং তিনি বিজ্ঞানের উপর বই লিখেছেন ৯ টি। পরিবেশ বিজ্ঞানের পাঠক্রম তৈরি এবং পরিবেশ বিজ্ঞানের গবেষণায় সমগ্র ভারতবর্ষের নিরিখে তাঁর অবদান চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। তিনি বিজ্ঞান চর্চায় গ্রন্থ রচনা করে ভারতবর্ষের পাশাপাশি গোটা ভুবনের বিভিন্ন প্রান্তে সুখ্যাতিপ্রাপ্ত ও জনপ্রিয় হয়েছেন। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিজ্ঞানের উপর বাংলা ভাষায় রচিত তাঁর এক হাজার পৃষ্ঠার উপরের বইটি দীর্ঘ কুড়ি বছর যাবত্ বহু পাঠক, ছাত্র-ছাত্রী গবেষকদের সুখপাঠ্য হিসাবে বিবেচিত রয়েছে। আর্সেনিকের উপর তিনি গভীর অধ্যায়ন ও গবেষণা করেছেন। আর্সেনিক দূষণ নিয়ে তিনি যুগন্তকারী গবেষণা করেছেন। আর্সেনিক দূষণ উপর গবেষণা করে তিনি ডিএসসি উপাধি লাভ করেন। সারা ভারতবর্ষে তিনিই একমাত্র কর্মরত ফিজিওলজির অধ্যাপক যার পিএইচডি ও ডিএসসি রয়েছে। এছাড়াও বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে বিভিন্ন প্রাদেশিক দৈনিক খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন এবং পত্র-পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত নিয়মিত বিজ্ঞানের বিষয়ে উপর লেখা প্রবন্ধাবলী ভীষণভাবে জনপ্রিয় এবং গবেষণালব্ধ প্রবন্ধগুলি বিশেষ সাড়াও ফেলেছে পাঠক দরবারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ড. পালের বিশেষ অবদানের জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস অধ্যাপক পালকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করেছে ইতিপূর্বে। ইম্ফলে মণিপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ তম বিজ্ঞান অধিবেশনে গত মার্চ ১৮ থেকে ২২, ২০১৮ সালে “রাজকৃষ্টো দত্ত মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০১৭-২০১৮” দিয়ে সম্মানিত করা হয় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি বিরল সম্মান এবং সম্মান আমাদের রাজ্যেরও।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে বাংলার মুখ উজ্জল করেছেন ড. পাল। তাঁকে এই বিশেষ সম্মানে সসম্মানিত করার জন্য বাঙালিরা গর্বিত হয়েছিল। ড. গৌতম পাল এর আগেও দেশে ও বিদেশে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি তাঁর মূল্যবান কাজের জন্য বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।