অগ্নিপরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে ভারতের চিকিৎসক সমাজ
হীরক মুখোপাধ্যায় (২০ মার্চ ‘২০):- এক অতি ভয়ঙ্কর অগ্নিপরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে ভারতের চিকিৎসক সমাজ। ভারতের চিকিৎসক সমাজের খ্যাতি-প্রতিপত্তি-সুনাম ভবিষ্যতে কতটা অক্ষুণ্ণ থাকবে তার সবকিছু নির্ভর করছে অগ্নিপরীক্ষার সফলতার উপর।
তবে এক্ষেত্রে অনেকটাই দুর্ভাগা ভারতের চিকিৎসক সমাজ, এঁরা না তো সময় মতো পান আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, না পান অত্যাধুনিক শিক্ষা, না পান নিজের ও পরিবারের জন্য সামান্য ফুরসত। এমনকি সব থেকে লজ্জার বিষয় এঁরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাবার উপযোগী পোষাক বা আনুষঙ্গিক জিনিসও অনেক সময় প্রয়োজনের মুহুর্তে পান না। কিন্তু, তাঁর পরেও এঁনারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন রোগীদের সুস্থ রাখতে বা প্রাণদান করতে।
কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোটাই আলাদা। ‘নোভেল কোরোনা ভাইরাস’-এর সঙ্গে মোকাবিলা করতে প্রথমেই দরকার অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা চরম সত্য যে ভারতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবাটা প্রায় অমিল। আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে অনেক চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা মতভেদ প্রকাশ করলেও এটা একবাক্যে মানবেন যে ভারতে চিকিৎসা খাতে ব্যায় সামান্যই হয়। সুতরাং এই স্বল্প মূলধনে যে আকাশকুসুম পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব নয় তা অনস্বীকার্য।
যেহেতু সমগ্র ভারতের সাথে তাল মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও জনপ্রতি চিকিৎসক, নার্স, আইসিইউ, আইসিসিইউ, ভেন্টিলেটর প্রভৃতির নিদারুণ অভাব সেখানে ‘নোভেল কোরোনা ভাইরাস’-এর সাথে আমাদের চিকিৎসক সমাজ কতক্ষণ লড়বেন সেটাই বড়ো প্রশ্ন।
তার উপর ভাবার বিষয় ভারতের জনপ্রতি উপার্জন ক্ষমতা, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন ‘আমার গরীব সরকার’, সেখানে রাজ্যবাসী কতটা গরীব এটা ভাবতে সময় লাগেনা।
একটা পরিসংখ্যান বলছে রোগীকে স্থানান্তরিত করতে যে সেবাযানের প্রয়োজন অধিকাংশ সময় তার খরচ বহন করার সামর্থ না থাকায় অনেক সময় রোগীকে বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় রাখা হয়। এক্ষেত্রেও যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও সংক্রমণ বা মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে।
এর পাশাপাশি রয়েছে ভারতীয় জনগণের সীমাহীন অজ্ঞতা, শুধুমাত্র শহরের কয়েকজন সুবেশ পুরুষ মহিলার থেকে দৃষ্টি সরালেই দেখা যায় এখনো ভারতে রয়েছে নিরক্ষরতা,পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যা প্রায় নয় কোটি অথচ খবরের কাগজ বিক্রি হয় মাত্র কয়েক লাখ। টিভিও সব মানুষের ঘরে নেই। সুতরাং আমাদের যে নেতানেত্রীরা যত কথাই বলুক ভারতের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের সচেতনতা যে অনেকটাই তলানিতে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অথচ প্রত্যেকটা মৃত্যুর জন্য চিকিৎসক সমাজ ও চিকিৎসা কর্মীদেরই আগে বলির পাঁঠা করা হয়।
তবে এর উল্টো দিকে আমাদের দেশের চিকিৎসক সমাজও যে নির্দোষ তাও নয়। কোলকাতার অধিকাংশ চিকিৎসকের দাবী বেশিরভাগ সময় গ্রামীণ ও শহরের চিকিৎসকেরা লোভের বশে রোগী হাতে রেখে রোগীর প্রায় সর্বনাশ করে তারপর বড়ো হাসপাতালে পাঠায় নয়তো নিজেদের অজ্ঞতার কারণে রোগ ধরতে না পেরে ছুতোয় নাতায় রোগীকে বড়ো হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ফলতঃ চাপ বাড়ে কোলকাতার হাসপাতালগুলোতে আর এর ফলে কোলকাতার হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা বিভ্রাট শুরু হয়।
এইসব কারণের ফলে এমনিতেই সরকারী হাসপাতাল ও সরকারী ডাক্তারদের উপর স্থানীয় মানুষের ভরসা কম। তাই পশ্চিমবঙ্গের যে সব মানুষের একটু সামর্থ আছে তাঁরা হাঁচি কাশি সারাতেও আজ দক্ষিণ ভারতে ছুটছেন।
শুধু সাধারণ মানুষ নয় পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সাংসদরাও আজ সামান্য ছানি অপারেশন করতেও দক্ষিণ ভারতে ছুটছেন।
ভাগ্যিস ‘নোভেল কোরোনা ভাইরাস’-এর এখনো সেরকম কোনো প্রতিষেধক বাজারে নেই, থাকলে দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালগুলোতেও এতক্ষণে চিকিৎসা বিভ্রাট শুরু হয়ে যেত।
ভারতীয় চিকিৎসক সমাজের কাছে এই মুহুর্ত সত্যিই এক পরীক্ষার সময়।
চিকিৎসকের অজ্ঞতা বা অদূরদর্শিতার জন্য রোগী মরলে চিকিৎসকেরা যেমন দোষী হবেন, এর পাশাপাশি অর্থ বা পরিকাঠামোর অভাবে চিকিৎসা পরিষেবা অমিল হলেও সর্বাগ্রে সাধারণ মানুষের বিরাগভাজন হবেন এই চিকিৎসক সমাজ।
উৎকণ্ঠা তথা শোকের মুহুর্তে সাধারণ মানুষ ভুলে যাবেন এখনো এই রোগের কোনো প্রতিষেধক বেরোয়নি, বিশ্বের বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসক সমাজ এখনো অন্ধকার হাঁতরে চলেছেন।
তাই এই মুহুর্তে উভয় সঙ্কটের মুখে ভারতের চিকিৎসক সমাজ, সাধারণ জনগণ অনেকাংশে ভেবে থাকেন চিকিৎসকেরা মুখস্ত বিদ্যার উপর চিকিৎসা করে থাকেন। ঘটনার ভেতর সত্যের ছিটেফোঁটা থাকলেও ওটাই কিন্তু একশো শতাংশ সত্যি নয়।
তাই ভারতের চিকিৎসক সমাজ বর্তমানে একরাশ উৎকণ্ঠাকে বুকে ধরেই ‘নোভেল কোরোনা ভাইরাস’-এর বিরুদ্ধে একযোগে কোমর বেঁধে লড়তে নামছেন।
সত্যিই ভারতীয় চিকিৎসক সমাজের কাছে এ এক উৎকট সমস্যা।
#Crucial_test_in_front_of_Indian_Medical_Faternity #Novel_Corona_Virus #Covid19 #Physician_Healthworker #Nursing_Staff #Health_News #Health_Scenario #Health_Hazzard