করোনার করুণা আর সত্যি মিথ্যের যাতোনা
বাবু বড় খিদে পেয়েছে ,দুটো ভাত দেবেন , দুটো ভাত । মা , বাচ্চাটা তিন দিন কিছু খায়নি একটু দয়া করুন ।
“শালা সব নাটক , গাড়ি দাঁড়ালেই ধান্দা শুরু “। এই বলে গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে সিগন্যাল খুললেই এগিয়ে যেত যে, অফিসের মেজো বাবু ,সেই আজ ফেসবুকে মেসেজ করেছে , “Salary deducted, need to pay school fees,kindly help”|
কাজের মেয়েটা ফোন করেছিল বৌদি হাতে কিছু নেই ,যদি টাকাটা পাঠাতে পারেন ভালো হয় ,আমার জনধন একাউন্ট নম্বর পাঠালাম বা UPI id মোবাইলেই পাঠাতে পারেন ।
দুটো বিপরীত মুখী ছবি আর অর্থনীতির বিশেষ রূপে জ্ঞানীদের পরামর্শ শুনে আতংকিত হবার কিছু নেই । ওরা “ঘন্টা খানেক” সঙ্গে থাকে, দিন ভর নয় ।
একদল বলছে কজন মরলো রে? আর একদল বলছে আজ্ঞে কত লিখবো ? মানুষ যেন আলুর বস্তা, পচা আলু তো , তাই মাঠেই ফেলে দে। আর এক দল ডিজিটালি দেখে নিচ্ছেন , চাপ দিয়ে যদি ২১শে বাংলায় পা দেয়া যায় । জন গণতান্ত্রিক বিপ্লব সোশ্যাল ডিসটেন্স নিয়ে চেঁচাচ্ছে আর কিছু নির্বোধ ধর্মের ভয় কে কারণে অকারণে জড়িয়ে ধরে রাম বা আলী কে পাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করছে । তবে লোকডাউন না মানলে রাম বা আল্লা ওপরেই দেখা দেবেন এখানে নয়।
অসহায় ভাবে লড়ছেন ডাক্তার ,পুলিশ, স্বাস্থ্য কর্মী ও আরো অনেকে আর ঘোলা জলে ঘন্টা খানেক TRP বাড়াতে ব্যাস্ত সকলে।
হটাত্ করে সকলে খুব ছাত্র দরদী হয়ে উঠেছেন, অনলাইন এ ক্লাস নেবেন । পড়া কি হচ্ছে ঈশ্বর জানেন, কিন্তু কিছু কামাই নতুন পথে এসে যাচ্ছে । এক দল স্কুল কর্তৃপক্ষ চাপ দিচ্ছেন ছাত্রদের থেকে জোর করে ফীজ নাও, না হলে টিচার তোমার মাইনে যাবে ! আজব দেশ ।
এক করোনার কারণে নয় ,অমানবিক সাম্যের কারণে আমাদের আগামী দিন ভয়ঙ্কর সন্দেহ নেই ।
আসুন দেখা যাক কেন এটা কে নিয়ে আতংকিত হবার দরকার নেই । কি কি হারাবেন ? চাকরি ? EMI এ কেনা ফ্ল্যাট ? বড় গাড়ি টা কেনা পিছিয়ে যাবে ? দেশের ৬০ শতাংশ গরীব আর ২০ শতাংশ নিম্ন মধ্য বিত্ত তাদের লড়াই অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ,ভোগ্য পণ্যের স্বাধ , থাকলেও সাধ্য নেই । তাদের আশা সন্তান শিক্ষিত হোক । বিপদ উচ্চ বিত্ত আর ধনিদের, যাদের ব্লাড প্রেসার শেয়ার মার্কেটের সাথে যুক্ত ।
কৃষি এবার ভালো ফলন দেবে । IT সার্ভিস সেক্টর ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে চালিয়ে নেবে । ইউরোপ ও আমেরিকায় স্কীলড লেবার লাগবে প্রচুর । ভারত এক নম্বর চয়েস হবে লোক নেয়ার জন্য।
ওষুধ ও প্রতিষেধক উত্পাদন এখানেই হবে । অনেক ম্যানুফ্যাকচারিং চীন ছেড়ে অন্য দেশে যাবে , সঠিক সুযোগ দিলে ভারতেও আসবে ।
ছয় মাস একটু কষ্ট করুন, এক বিরাট সম্ভাবনা সামনে এসে যাবে । খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে বস্ত্র বাণিজ্য বাড়বে ।
মেডিকেল যন্ত্র উত্পাদনে মেক ইন ইন্ডিয়া উজ্জ্বল ভূমিকা নেবে । যারা নতুন বিসনেস মডেল নিতে পারবে না তারা হারিয়ে যাবে এবং সেটাই নিয়ম । যুগের সাথে চলতে না পারলে হারিয়ে যাবে । কোয়ালিটি ও কাস্টমার ওরিয়েন্টেড আটটিচুড থাকতে হবে ।
তবে পৃথিবী ও পুঁজিবাদী দুনিয়া বাস্তব এখনো বোঝেননি । বাঁচার জন্য দরকার পরিষ্কার বাতাস , শুদ্ধজল আর পেটভরা পুষ্টিকর খাবার । অরে এতো পশু পাখিও খায় ,তাহলে আমরা মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব আমাদের কোনো তফাত্ নেই ?
নিশ্চয়ই, মানুষ হিসাবে আমাদের উন্নতির গুঁতোয় পরিবেশ বিষাক্ত , এক সে বারকার এক মোবাইল হাতে, কিন্তু মনের কথা বলা হয় না ,শোনাও হয় না । মানসিক অবসাদ কাটাতে অনলাইন এক app থেকে আর একটায় ঘুরে বেড়ানো, আর না পাওয়ার লিস্ট টা কে বাড়িয়ে নিয়ে চলা ।
ডিগ্রী পেলাম ডজন দরে, কিন্তু ভালো মানুষ হলাম না এক তিল পরিমান । প্রফেশনাল শব্দের আড়ালে খুনে মানসিকতা , প্রফিট টার্গেট আর প্রোমোশনের জালে হারিয়ে ফেলেছি অনেক কিছু । মায়ের কোলে শুয়ে কাল বৈশাখীর বিদ্যুত্ কে ভয় না পাওয়ার মজা । বাবার ঘাড়ে উঠে চিড়িয়াখানায় বাঘ দেখা । কফি হাউস প্রেমিকার জন্য অন্তহীন অপেক্ষা আর সঙ্গী কফির কাপ । অবসর শব্দ টাই অচেনা ।
নতুন পত্রিকার ধারাবাহিক গল্প , বুদ্ধদেব গুহ না বিভূতিভূষণ নাকি জিম করবেট কার লেখায় দেখা জঙ্গলে ঘুরতে যাবো । নতুন কোনো বিদেশী ছবি আর একাডেমির নতুন নাটক নিয়ে তর্ক আবার জমে উঠুক।
এক সিগরাটে পাঁচ বন্ধু যেন পঞ্চ পান্ডব আর ফুটো পকেট যেন দৌপদীর অহংকার । মোহনদার আলুকাবলি বা বসুধার ফুচকা কোনোটার স্বাদ কিন্তু মলের হাইটেক দুনিয়া জানে না । জাঙ্ক ফুডের এবার বাণিজ্য কমবে ভাবা ভুল তবে মোহ কিছুটা স্তিমিত হবে । অনাবশ্যক গ্যাজেট লাগবে না । মেডিক্লাইম ও মেডিকেল ইন্সুরেন্স প্রিয় হবে।
অর্থনীতি মোটেও বিপদে নেই , বিপদে আছে আমাদের লোভ আর ভোগ্য পণ্যের দুনিয়া আর এই দুনিয়ার লোকজন । যারা এখনো পে চেক ট্যু পে চেক বাঁচেন , অনলাইন এ বিপণনের সুযোগ নিন ,নতুন পথ খুলে যাবে । শুধু সততা আর মেহনত কে সম্বল করে ঘুরে দাঁড়ান ।
বলতে পারেন মোবাইল ছাড়াও ১০০ বছর আগে মানুষ বেঁচে ছিল এবং অনেক বেশি মানবিক ছিল । নিজের গাড়ি সবার ছিলোনা, কিন্তু প্রিন্সেপঘাট বা ভিক্টোরিয়ায় নিশ্চিন্তে পরিবার বা প্রেমিকার সাথে বেড়ান যেত । শালীনতা ও সৌজন্য কোনোটাই কম ছিলোনা । বিজয়া তে দেখা হতো ,হোয়াটস্যাপ মেসেজেই শেষ হতো না দশমীর শ্রদ্ধা ।
আজ তো স্বামী স্ত্রী ও একে ওপরের emi রিলেশন হৃদয়হীন আবেগ আর প্রয়োজনের পুরোক । বীণে সুতোর টান যেন একটু আলগা ।
কৃষক , শিক্ষক , ডাক্তার , মুদিখানা , নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার কমবে না । যারা রোজগার করবেন ,তারা নিজেদের ভোগ্য পণ্যর থেকে অত্যাবশকীয় বাজারের অংশ হয়ে উঠুন , ভারতীয় জিনিস কিনুন আর আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ভারতীয় কারখানার মাল কিনুন ।
২-৩ মাসের ব্যবসা বন্ধ প্রফিট কমাতে পারে , ব্যবসার বাজার নয় । অযথা ভয়ের পরিবেশ তৈরী করে মুনাফাখোরদের এই পরিস্থিতিতে অসহায়দের কাজ কেড়ে নিয়ে নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর আয়োজন কে সফল হতে দেবেন না ।
সকলে মিলে প্রতিবাদের পথ তৈরী রাখুন । আমি নয় আমরা এই হোক নীতি । কোম্পানির আর্থিক হাল ফেরা পর্যন্ত অতিরিক্ত বোনাস বা অপ্রয়োজনীয় দাবির জঙ্গি আন্দোলন বন্ধ করুন । ন্যায্য অধিকার নয় এমন দাবি ছেড়ে দিন ,সাময়িক ভাবে সহযোগিতায় যদি কোম্পানি বাঁচে তবে ডেফার্ড পেমেন্ট একসেপ্টেড হওয়া উচিত ।
কেন আর্থিক মন্দা আসবে মানুষ কি খাওয়া ছেড়ে দেবে? মানুষ কি জামাকাপড় পরা ছেড়ে দেবে ? মানুষ চলাচল ছেড়ে দেবে ? প্রয়োজন কমবে না ? বিসনেস মডেল এডজাস্ট করতে হবে । অযোগ্য ম্যানেজার বাদ দিয়ে প্রকৃত কাজের মানুষদের সুযোগ করে দিন । ভারত বিশ্বের মধ্যে যুবক দেশ, নতুন হাতে কাজ দিন ।
ডিজিটাল ইকোনমি আর কৃষি পণ্যের বিপণন বিশ্বজুড়ে শুরু করুন । আমেরিকান কর্নফেলিক্স নয় ,শুরু করুন মাক্কী দা রুটির ব্রান্ডিং । তোমরা যদি আমাদের পিজা আর চাওমিন ভক্ত করতে পারো , তবে আমরাও ইডলি ,বড়া , সাম্বার , আলু পোস্ত বা কচি পাঁঠার ঝোল বা চিংড়ির মালাই কারীর ভক্ত করে তুলবো বিশ্বকে ।
অক্সফোর্ড ,কেমব্রিজ বা MIT নয় ওদেশের ছেলে মেয়ে আসবে আমাদের দেশে লেখা পড়া শিখতে । আবার নালন্দা , তক্ষশীলা ,ওদন্তপুরী হয়ে উঠুক আমাদের ইউনিভার্সিটি গুলো । ৫০০০ হাজার বছরের সভ্যতা এতো সহজে হারবে না ।
ভয় না পেয়ে ইসরায়েলের মতো আসুন দেশ গড়ার কাজে হাত লাগাই । এটা বিলাপের সময় নয় দেশ গড়ার সময় । নেতা নেত্রীদের ফলো না করে, বিবেক কে ফলো করুন আর ওদের বাধ্য করুন দেশ ভক্ত হয়ে উঠতে । যত কম সাজানো খবর দেখবেন ততো জীবন শান্ত হবে ।
আমি নিশ্চিত করোনা খুব দ্রুত এন্টিবায়োটিক পাবে বা মানুষ নিজের ভিতরেই প্রতিষেধক ক্ষমতা গড়ে নেবে । কিন্তু দয়া করে পরিবেশ কে ধ্বংস করে মেকি উন্নয়ন আর করবেন না ।
পরিশেষে বলি আবার তোমরা মানুষ হও । উলঙ্গ রাজা কে বলুন রাজা তোর কাপড় কোথায় ?