সরকার আমাদের দাবী না মানলে আমরাও সরকারী আদেশ মানতে বাধ্য নই : ইউএএনইএ
এম রাজশেখর (১৮ জুন ‘২০):- সরকার তাঁদের দাবী না মানলে তাঁরাও সরকারী আদেশ মেনে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য নয়, জাতীয় বার্তা দিয়ে আজ মূলতঃ সরকারের সাথে সংঘাত শুরুর পথে এগলো এএনএম ২-দের বৃহৎ সংগঠন ‘ইউনাইটেড অক্জিলারি নার্সেস (২ এ এন এম-আর) এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন ডব্লিউ বি’-র নদীয়া শাখা।
এই মুহুর্তে নদীয়া জেলায় রয়েছে ১৭ টা সমষ্টি উন্নয়ন বিভাগ। প্রত্যেক বিভাগেই রয়েছেন ১ জন করে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক।
আজ প্রায় প্রত্যেক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের হাতে দুই দফা দাবী সমন্বিত এক দাবীপত্র পেশ করে ইউএএন(২ এএনএম-আর)ইএ ডব্লিউ বি’-র নদীয়া জেলা শাখা। দাবীপত্রের বয়ানের পরিপ্রেক্ষিতেই এই তথ্য সামনে এসেছে।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের হাতে দাবী সনদ পেশ করে ইউএএন(২ এএনএম-আর)ইএ -র নদীয়া জেলা কমিটির সদস্যা রুমা দাস জানান, “আমাদের প্রথম দাবী- কর্মরত অবস্থায় আমরা ও আমাদের পরিবারের কেউ কোরোনায় আক্রান্ত হলে আমাদের চিকিৎসার সুনির্দিষ্ট আয়োজনের নির্দেশিকা জারি করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবী- কর্মরত অবস্থায় আমাদের মৃত্যু হলে পরিবারের একজনের চাকরির নিশ্চয়তা সহ এককালীন অনুদানের ঘোষণা করতে হবে।”
রুমা দাস-এর পাশে দাঁড়িয়ে সংগঠনের নদীয়া জেলা কমিটির অন্যতম সদস্যা মৌসুমী বিশ্বাস জানান, “আমরা সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন তথা রাজ্য প্রশাসনকে এও জানিয়ে দিয়েছি, যতক্ষণ না সুনির্দিষ্টভাবে কোনো নতুন সরকারী নির্দেশিকা আসছে ততক্ষণ আমরা শুধুমাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রিক দৈনন্দিন নির্দিষ্ট কাজই করব।”
বলে রাখা ভালো, এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসক মহলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে যে সকল পরিষেবিকাগণ ‘কোভিড ১৯’ আক্রান্তদের সনাক্তকরণ বা শুশ্রূষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন তাদের মধ্যে এএনএম ২ পরিষেবিকারা অন্যতম।
হলুদ কাপড় পরিহিত এই কর্মচারীবৃন্দ একদিকে যেমন গ্রামীণ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দৈনন্দিন সাধারণ পরিষেবার সাথে যুক্ত, তার পাশাপাশি নিপুন হাতে তাঁদের কোরোনা সংক্রান্ত নানান কাজও করতে হয়।
প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম না পেয়েও এতদিন পেটের তাগিদে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সব কাজই হাসিমুখে করে আসছিলেন হলুদ কাপড়ের এই দিদিমণিরা।
গত ১২ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে এক নির্দেশিকা (মেমো : নং এইচ এণ্ড এফ ডব্লিউ ১৮০/২০) জারি করে এএনএম নার্সদের ‘সেফ হোম’-এও কাজ করার আদেশ পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এএনএম ২ নার্স সংগঠনের এই দাবীপত্র পেশ বলে মনে করছে জেলা তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য মহল।
২এএনএম-আর সংগঠনের বক্তব্য অনুযায়ী, “স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে জারি করা ওই নির্দেশনামায় মেমো নম্বর উল্লেখ থাকলেও কে যে নির্দেশ পাঠিয়েছেন ছাপার অক্ষরে তাঁর নাম বা পদ মুদ্রিত নেই, তার বদলে রয়েছে একটা জড়ানো সই।”
এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এএনএম ২ নার্সদের এই স্পষ্ট কথা রাজ্য প্রশাসন ভালো চোখে দেখবেনা। সুতরাং আগামীদিনে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
রাজ্য সরকার ও এএনএম ২ নার্সদের এই দ্বৈরথে সমস্যায় পড়তে পারেন গ্রামীণ জনগণ।
এই বিষয়ে নদীয়ার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাথে যুক্ত আধিকারিকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, “স্বাস্থ্যভবন-এর উপযুক্ত আধিকারিকগণকে এই বিষয়ে জানানো হবে। আশা করি খুব তাড়াতাড়িই এই জটিলতার অবসান হবে।”
নদীয়া জেলা প্রশাসনের একাংশের ধারণা, “একদিকে স্বল্প বেতন অন্যদিকে কাজের চাপ বৃদ্ধি, পরস্পর বিরোধী এই দুই বিষয়ই এভাবে খেপিয়ে তুলেছে এএনএম ২ নার্সদের।”