স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশকেও একসাথে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ সরকার
দেশ ভক্তি , মাতৃভক্তি আর সততার সাথে জীবন যাপন মানুষের মানবিক গুণাবলীর অন্যতম । আইন অনুসারে চলা অন্যতম কর্তব্য , তাই যারা দেশ চালাবেন তাদের যোগ্য হতে হবে , আর তা আমাদেরই নির্বাচিত করতে হবে । ~ সুমন মুন্সী
এম রাজশেখর (২৫ জুলাই ‘২০):- শপথ নিন, বাঁচতে গেলে ‘কোরোনা ভাইরাস’-এর মতো কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বা জার্ম-দের নয় বরং রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এই দলগুলোর সাথে সম্পর্কিত কারো সাথে দেখা করার পরই চোখ মুখ হাত পা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে কোনো রোগ নয় বরং এরাই হলো মানুষের জীবন নষ্টর প্রধান কারিগর।
শুনতে অবাক লাগছে কী! লাগাটাই স্বাভাবিক, কেননা প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ পরের বলা কথায় যতটা ভাবিত হয় তার সিকিভাগও কোনোদিন নিজের চোখে দেখা বিষয় নিয়ে ভাবিত হয়না। আর এখানেই যত সমস্যা।
বৃথা বাক্যব্যায় না করে মূল বক্তব্যে আসা যাক। হে শিক্ষিত ব্যক্তিসকল, একটু ভেবে বলুন তো এই মুহুর্তে ভারতের মোট জনসংখ্যা কত, আর তার কত শতাংশ কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত?
উত্তরটা অনেকটা এরকম হবে যে এই মুহুর্তে ভারতের জনসংখ্যা ১৩৬ কোটির আশেপাশে এবং এই সংখ্যার ১ শতাংশও কোরোনা আক্রান্ত নয়।
এবার পশ্চিমবঙ্গের দিকে নজর রেখে বলুন এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা কত আর তার অনুপাতে কত শতাংশ মানুষ কোরোনা আক্রান্ত?
এক্ষেত্রেও যদি ভুল না ভেবে থাকেন তো জবাবটা হবে প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যা আর কোরোনা আক্রান্ত এই সংখ্যার ১ শতাংশও নয়। আর কোরোনা সংক্রান্ত মৃত্যুর কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেলো।
তাহলে এখন একটাই প্রশ্ন মনের মাঝে ভেসে উঠবে তাহলে মানুষকে আতঙ্কিত করার পেছনে কারণটা কী ? কেনই বা সরকার এভাবে উৎকণ্ঠা দেখাচ্ছে ?
স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক খবরগুলো যদি রোজ দুবেলা শুনে থাকেন; তাহলে নিশ্চয়ই বলবেন আসলে এই রোগের কোনো ওষুধ নেই তো..।
ওষুধ তো এখনো অনেক রোগেরই আবিষ্কৃত হয়নি। ক্যানসার, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে এমন অনেক রোগ আছে যার ওষুধ এখনো বিশ্ব বাজারে আসেনি।
পাল্ট যুক্তি তোলা যেতে পারে আসলে কোরোনা ভালোরকম ছোঁয়াচে তো, তাই সংক্রমণের একটা ভয় সব সময় থেকেই তো যায়। কে আর ইচ্ছা করে সংক্রমিত হতে চায়।
পাঠকদের অবগতির জন্য বলি, এই কদিন আগেও যখন কোরোনা আক্রমণ দেশে সেভাবে শুরু হয়নি তখনো বিভিন্ন চিকিৎসক বলতেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এশিয়া মহাদেশ হতে চলেছে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রধান ঘাঁটি।
প্রতিদিন ভারতে যত লোক সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কারণে মৃত্যু বরণ করেন তার থেকে অন্তত ১০ গুণ লোক ডায়াবেটিসে মারা যাবেন।
একইভাবে ক্যানসার বিশেষজ্ঞরাও দীর্ঘদিন ধরে একই কথা বলে আসছেন। এসব শোনার পরেও মানুষ সেভাবে ভয় পায়নি, যা এখন পেয়েছে।
আমার একটাই প্রশ্ন কোনটা বেশি ভয়ের বা আতঙ্কের, কোরোনার মতো কোনো মারণরোগ না রাজনৈতিক দলগুলোর অপদার্থতা আর অসততা ?
স্বাধীনতার প্রাপ্তির ৭৩ বছর পরেও যদি কোনো দেশ তার জনসংখ্যার ১ শতাংশ লোকেরও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে না পারে সেটা বেশি আতঙ্কের না কোরোনা ভাইরাস বেশি আতঙ্কের ?
যদি ধরে নেওয়া যায় দেশে লকডাউন শুরুর দিন থেকেই ভারতে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ, তাহলে বুকে হাত দিয়ে বলুনতো আজ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কত আর কতজনই বা মারা গেছেন !
রোগাক্রান্ত বা মৃত্যুর কোনো সংখ্যাই কাম্য না হলেও তা কী আজ পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশকেও স্পর্শ করেছে।
সরকারী তথ্য বলছে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষ্যর বেশি এবং মৃত প্রায় ৩০ হাজার। অর্থাৎ পরিসংখ্যান মতে ভারতের জনসংখ্যার ১ শতাংশও আক্রান্ত বা সংক্রমণের শিকার নন, মৃত্যুর সংখ্যা তো সেই অনুপাতে কিছুই না।
তাহলে প্রশ্ন সারা দেশের গণমাধ্যম এভাবে চেঁচামেচি করছে কেনো ?
নিজেকে প্রশ্ন করুন এখনো পর্যন্ত কোনো সংবাদমাধ্যম কী দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছে, স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ জনগণের জন্যও কেনো হাসপাতালে শয্যা নেই, কেনো জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী আজও অপ্রতুল ?
কেনো বাড়ানো হয়না মেডিক্যাল কলেজ, কেনো বাড়ানো হয়না জনসংখ্যার অনুপাতে মেডিক্যাল কলেজের আসন সংখ্যা, আর কতদিন মেধাকে অগ্রাহ্য করে ম্যানেজমেন্ট কোঠার দোহাই দিয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হবে ?
কোনো সংবাদমাধ্যম কী প্রশ্ন তুলেছে দেশে অতিমারী (?)-র মতো সময়েও কেনো বেশিরভাগ চিকিৎসক “আমি সরকারী চিকিৎসক নই” বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন ?
না কোনো প্রচার মাধ্যমই উপরের বলা এই অপ্রিয় প্রশ্নগুলোকে তুলে ধরে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলোর বিরাগভাজন হতে চাইছেনা। শুধুমাত্র সরকারী বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য কিছু অবৈধ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যেই চুপ সমস্ত প্রচার মাধ্যম।
এবার নিজেরই বলুন কে বেশি ক্ষতিকারক, কোরোনার মতো কোনো ভাইরাস বা রোগ নাকি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো।
দোষ বা অপরাধ কার বেশি কোরোন-র মতো কোনো রোগের না স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যাঁরা কেন্দ্রে ও প্রদেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গদি সামলেছেন তাদের ?
শুধুমাত্র চোখে গগলস এঁটে, মুখে মাস্ক বেঁধে তার উপর ফেস শিল্ড আটকে, মাথায় হেড ক্যাপ লাগিয়ে গায়ে প্লাস্টিকের জ্যাকেট চাপিয়ে ঘনঘন হাতে দুনম্বরী স্যানিটাইজার লাগালেই কী এই সামূহিক দূষণ থেকে বাঁচা যাবে নাকি অন্য কোনো পন্থা খুঁজতে হবে ?
আগে যখন ফোন বলতে মানুষ শুধু ল্যাণ্ডলাইন বুঝতেন তখন বিএসএনএল-এর নবাবী দেখলে তাক লেগে যেত, যেই মুহূর্তে এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল, সেইদিন থেকেই বিএসএনএল-এর ভিখারীর দশা শুরু হয়েছে।
সেভাবেই যেদিন থেকে দেশে চিকিৎসক ও হাসপাতালের সংখ্যা বাড়বে সেদিন থেকেই আমজনতা উপকৃত হবে। যে চিকিৎসক যোগ্যতা ছাড়া ৫০০ টাকা দর্শনী চাইবেন তিনি তৎক্ষনাত পরিত্যাজ্য ঘোষিত হবেন, আর ঠিক সেভাবেই অকারণে বিল বাড়াতে গেলে বেসরকারী হাসপাতালও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে।
সময় এসে গেছে এখন মানুষকেই ভাবতে হবে তাঁরা কী চান নিজেদের সুরক্ষা না নেতাদের ধাপ্পাবাজী।