ডাঃ রঘুপতি ষড়ংগী।
ভারতীয় সনাতন ধর্ম অনন্তের পূজারী। সর্বম্ খল্বিদম্ ব্রহ্ম। ব্রহ্ম শব্দটি ‘বৃঙ্’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন…….. যার অর্থ বৃহৎ এর চেয়েও বৃহৎ, সীমাহীন এক চিরন্তন অস্তিত্ব। সেই ব্রহ্ম এর চরিত্র কী ? উপনিষদ এর ঋষি লিখছেন…..” সত্যম্ জ্ঞানম্ অনন্তম্ ব্রহ্ম।
স্বাভাবিকভাবেই কোনো সীমাহীন তত্বকে ঋষি-মহর্ষিরা তাঁদের সুমেধা তে ধারণ করতে পারলেও আমাদের মতো সীমাবদ্ধ চিন্তার মানুষ সেই অনন্ত তত্বকে চিন্তা-ভাবনার স্তরে আনবে কী করে ? অসম্ভব ।
হয়তো এই কারণেই, সীমাহীন তত্বকে সীমাবদ্ধ ” ঘটে-পটে-আলেখ্যে বা মূর্তিতে ” কল্পনা আমাদের।
না, এ কোনো অপরাধ নয়। স্থান-কাল-পাত্র- পরিবেশ এর পরিবর্তন এর সাথে সাথে প্রকৃতির নিয়মে মানুষের চিন্তা-স্তরে পরিবর্তন আসাটাকে দোষ দিবেন কী করে?
তাই তো, আজ আমাদের সারাটি বছর জুড়েই বাড়িতে, বিদ্যালয়ে বা পাড়ার মোড়ে দেব-দেবীদের আগম নিগম লেগেই থাকে। তেত্রিশ-কোটি দেব দেবীর সংখ্যাটি বেশ কম হোয়ে গেল না ? এক শ ত্রিশ কোটি জনসংখ্যার এই সুবিশাল দেশে প্রত্যেকটি মানুষের মেধা, চিন্তা-ভাবানা, কল্পনা করার শক্তি যেহেতু পৃথক তাই তার আরাধ্য দেব-দেবীও আলাদা হবেন। এইভাবে বাড়তে বাড়তে আমাদের দেশে যদি দেব-দেবীদের সংখ্যা একদিন এক শ ত্রিশ কোটি হয়ে যান সেদিন ও অবাক হওয়ার কিছু নেই কিন্তু !
বৈদিক ভারত জানে, কল্পনার এইসব দেব-দেবীরা আসলে সেই অনন্তের মুখে লাগানো আলাদা আলাদা এক একটি মুখোশ। কখনো সেই ‘অনন্ত’..……….
” অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতী “……. কোথাও ” সহস্রা শীর্ষপুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ”…… রূপে তিনি রুদ্র, কোথাও সেই একই আবার অনন্ত মুখোশ বদলে ” অহংরুদ্রেভির্বসুভিশ্চরামি অমাহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ”………রূপে তিনি কালি, আবার কোথাও ” যস্যা পরতরং নাস্তি সৈষা দুর্গা প্রকির্তিতা”………
আবার সেই অনন্ত” ই আজকের দিনে
“ওঁ গণানাং ত্বা গণপতিং হবামহে
প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতিং হবামহে
নিধিনাং ত্বা নিধিপতিং হবাবমে বসো মম।
অহমজানি গর্ভধমা ত্বমজাসি গর্ভধম্।।”
……………ঋগ্বেদ।
পুরাণ আদিতে গনেশ এর জন্মের পৌরাণিক ইতিহাস
রসে-বসে বিভিন্ন। কোথাও শিব-দুর্গা’র আদরের ‘বাপ্পা’।
আবার কোথাও, কৈলাশ পর্বতের অন্ধকার গুহাতে থাকা বিরহিনী মা শিবানী’র গায়ে জমা ময়লা থেকেই তাঁর উৎপত্তি। ‘গনেশ’ নামক দেহের উৎপত্তির বাঙময় কল্পনা যাই হোক ….. গনেশ শব্দের মূলে কিন্তু রয়েছে গম্ ধাতু…… যা নির্মল ব্রহ্ম-জ্ঞান এর দ্যোতক, যা নির্বাণ বা মুক্তি প্রদানকারী। ‘ইশা’ অর্থে ….. অনুশাসন বুঝায়।
“গনেশ উপনিষদ” এ স্পষ্ট উল্লেখ করা আছেঃ
” ত্বাম্ অবস্হ ত্রয়া তিতাহ”….. জীব এর জাগ্রত, স্বপ্ন এবং সুসুপ্তির পারে তিনি এক জ্ঞানময় তূরীয় স্থিতি।।
” ত্বাম গুণ ত্রয়া তিহায় “….. সত্য-রজঃ-তম জীবের এই তিন গুণের ওপারে থাকেন গণপতি।
” তভম দেহা ত্রয়া তিতাহ”….. স্থুল, সূক্ষ্ম এবং কারণ শরীর এর অতীত সত্বা তিনি।
‘”তভম কালাঃ ত্রয়া তিতাহ”…… গনেশজী অতীত,
বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ….. জীবের এই তিন কালের বাইরে অবস্থান করেন।
বৈদিক স্থিতিতে গনপতি’র উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে…….
” তবম্ ব্রহ্মাসর্বম্ বিষ্ণুস্ত্ব্বম্ রুদ্রস্ত্ব্বম্ ইন্দ্রস্ত্বম্ অগ্নিষ্ট্বম্
বায়ুস্ত্বম্ সূর্যস্ত্বম্ চন্দ্রমস্তবম্ ব্রহ্ম ভূব ভূবাস সুভাব ত্বম্” ।…… দেখুন, হাতি’র মাথাতে ও সেই একই স্বাদ,, একই
অনুভূতি……. সেই একটা ই পরমপ্রাপ্তি…….. এক কথায় ……..” ব্রহ্মময়ম্ ইদম্ জগৎ ” !!!
ওঁ গং গণপতয়ে নমঃ ।
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.