শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের (প্রথম ভাগ) – বারো ইয়ারি কথা
সুমন মুন্সী,কলকাতা
(আগে যা হয়েছে জানতে ক্লিক করুন প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ, চতুর্থ ভাগ,পঞ্চম ভাগ,ষষ্ঠ ভাগ, সপ্তম ভাগ, অষ্টম ভাগ, নবম ভাগ)
আসল নামটা তোলা থাক।
অপূর্ব দেখতে ছিলো শতরূপা,
শ্যামলা কিন্তু ভীষণ মায়াবী ।
তন্নী, একটু খাটো,কিন্তু ব্যক্তিত্ব বেশ ভারী ।
মাস্টার বা অনার্স পাস না দিলে, ফিরেও তাকাতো না,কথা বলতো যেন, সৌমিত্রের কণ্ঠে বনলতা সেন ।
এমন কারো প্রেমে পরলে যা হয়, তাই হলো আমার,চাতকের মতো তাকিয়ে থাকা আর দিন গোনা।
ঠিক এমন এক ফাগুনের দিনে, রাঙা শাড়িতে হটাৎ এসে দাঁড়ালো,এসেই প্রশ্ন তোমার নাম বিলটু? চমকে বলি মানে ইয়ে ।
ইয়ে আবার কি নাম? ভালো নাম কি ।অনেক সাহসের সাথে মন্টু মিত্তিরের মতো বললাম,আমার নাম দীপঙ্কর ।
মন্টু মিত্তির কে চেনেননা, অরে সেই লুচ্ছা লাফাঙ্গা,তিন ভুবনের পাড়ের সৌমিত্র যে ।
আমিও যে তার মতো ফেল করে, কাগজের আপিসে কপি রাইটার। সবাই বিল্টু বলেই চেনে ।
এই শোনো, হঠাৎ সম্বিৎ ফিরলো ডাকে। বলো থুড়ি মানে বলুন ।
এমন করে তাকিয়ে থাকো কেন আসা যাওয়ার পথে? কি নাতো, এক পাড়ায় থাকি তাই দেখা হয়ে যায় ।
এই তো সেদিন বাজারে মাংসের দোকানে তাকিয়ে ছিলে,তারপর, সাতদিন আগে মিষ্টির দোকানে ।
গতমাসে বাবা যখন হাসপাতালে তখন ও ছিলে ।
কাল একটু বাড়াবাড়ি করে লাইব্রেরিতে? আজ্ঞে আমিতো বই আনতে গেছিলাম অফিসের।
যাই হোক, অমন লুকিয়ে দেখবেন না।
“সেকি তবে কি ভাবে দেখবো”, বলেই জীব কাটলাম ।
বাড়িতে আসবেন, পার্কে বসবেন, সরাসরি কথা বলবেন ।
চোরের মতো নয় বুঝলেন, লুকোচুরি আমি পছন্দ করিনা ।
রোজ কলেজ থেকে যখন ফিরত,গোঁধুলী বেলার সেই আলোতে হাজার জোনাকি ফিরত ।
আজ আবার যেন কাম সেপ্টেম্বর বেজে উঠলো, বিল্টুর মনে ।
শুধু সুমন কে ম্যানেজ করতে হবে, অনেক গোপন কথা জানে ।
না, তেমন কোনো বাজে কাজ নয়, এই ধরুন, বলেই দেই, ক্লাস সিক্সে বিড়ি খাওয়া, সেভেনে সুমনের খাতার সম্পাদ্য টোকা।
ক্লাস টেনে নূন শো এর লাইন এ ধরা পরে বিক্রমদার হাতে ধোলাই ।
পম বলে এক বিছু ছিল জানেন, প্রথম ভাঙ খাইয়ে ছিল । সুজয় ভালো ছেলে সেদিন না বাঁচালে বাবা ঠ্যাঙাতেন নির্ঘাত ।
দীপ ভালো ফুটবল খেলতো, ওকে একবার ল্যাং মেরে ছিলাম এটাও সুমন জানতো ।
তবে আমার সাথে যে মেয়ে গুলো পড়তো খুব দেমাকি ছিল, পাত্তাই দিতো না কেউ । উত্তরা, অর্পিতা বা চন্দ্রা পাশে বসলেই গম্ভীর হয়ে যেত।
রুমি, ব্রততী আর শর্মিষ্ঠা একটা ঠান্ডা দৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দিত, দূর হট্ ।
লিটন বলে এক মালের পাল্লায় পরে ভ্যালেনটাইন গিফট, একবার সবাইকে চকলেটে দিলাম । খেয়ে নিলো সবাই তারপর, নিদারুন ঘটনা,
আমাকেই খালি প্যাকেট দিয়ে বললো, “ডাস্টবিনে ফেলে দে” ।
এতো বড় অপমান আর কেউ করেনি, এই সময় সুরের দেশে প্রবেশ । শতরূপা কে দেখলাম, আমার মনে যেন নতুন সুর বেজে উঠলো ।
“কি ভাবছেন এতো?” শতরূপা প্রশ্ন করলো|
“মানে আপনার বাড়ি যাবো, পার্কে যাবো, কিন্তু কেন?”
আপনার মা আপনাকে ইংলিশ পড়াতে বলেছেন”।
“ইংলিশ? কিন্তু কেন ।”
“আপনার বাবার আপিসে চাকরি বেরোচ্ছে ম্যানেজারের তাই “।
সেই শুরু হলো ক্লাস, দেখতে দেখতে কেটে গেলো তিরিশ বছর । আজ আমি তার ক্লাসেই পড়ি, এমএ শেষ করে কলেজ পড়াই না ।
নিজের ডিজিটাল কাগজের ব্যাবসা, দিল্লি,মুম্বাই এমন কি ঢাকা থেকে অর্ডার আসে । এ এক অন্য মন্টু মিত্তির এর গল্প, শুধু সুমনই জানে এটা ।
ফুচকা চেয়েছে না দিলে ফাঁস করে দেবে কি জানেন? কলেজ প্রিজম কে ভেঙে ছিল । চেনেন তাকে?
সুমন জানে না, আমার শতরূপা আমার সব জানে, তবু ওদের ফুচকা খাওয়াবো কেন জানেন?
ও যে আমার প্রাণের বন্ধু, বড় ভালোবাসি ওদের ।
ওই দেখুন সুমন আবার চেঁচাচ্ছে, “কিরে নামবি, না বলে দেব” । সাইকেলের ঘন্টা বাজালো ট্রিং ট্রিং ট্রিং তিনবার ।
আপনারা একটু বসুন সুমনের সাথে মিকি আর উদিত ও এসেছে । কলেজে লোকে এদের থ্রী মাস্কেটিয়ার্স বলতো।
“কোথায় চললে, তোমার না বিসনেস মিটিং মাইক্রোসফটের সাথে?” শতরূপা প্রশ্ন করলো ।
বিল্টুর জন্য বিল গেটস ওয়েট করতে পারবে, কিন্তু সুমনদের ওয়েট করানো যায় না, এটা যে ছেলেবার ডাক । প্রাণের ডাক ।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো বিল্টুর, ঘেমে গেছে একেবারে, টেক্সাসের এই ভ্যাপসা গরম ঠিক যেন কলকাতার গরম কাল । কিন্তু সুমন কে স্বপ্নে দেখলাম কেন? ও তো কত কাল ছেড়ে চলে গেছে, অন্তরা কে একবার ফোন করে দেখবো মেয়েরা কেমন আছে , মনে মনে বললো বিল্টু ।
অন্তরা যে সুমন কে অন্তর থেকে চেয়েছিলো, একজন মানুষের মতো মানুষ।
হোয়াটস্যাপ খুলে এক এক করে বন্ধুদের রোল কল শুরু করলো বিল্টু ৪১৫ রোলে এসে কোনো উত্তর নেই, কি করে উত্তর দেবে ওটা যে সুমনের ছিল ।
চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেলো বিল্টুর, সুমনের হোয়াটস্যাপ স্টেটাস আজও বলছে “জয় হিন্দ”।
নিচে বিল্টুর ছেলে সাইকেলের ঘন্টা বাজালো ট্রিং ট্রিং ট্রিং তিনবার।
দ্বিতীয় ভাগ – শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের – দ্বিতীয় ভাগ – সুমন কি বেঁচে আছে?
*** কাল্পনিক গল্প বাস্তবের চরিত্র ***