নতুন বছর তুমি কি খুঁজে পেলে
সুমন মুন্সী, কলকাতা
এই সুমন শোন, “কিছু প্রশ্ন আছে? আছে কি জবাব তোর কাছে?”।
নতুন একটা বছর টুপ্ করে খসে পড়লো আবার,জগতের সবার কি আনন্দ,
যেন তারিখ ১লা না হয়ে অন্য কিছু হলে সূর্য উঠতো পশ্চিমে।
যে ছেলেটা খায়নি গত রাত্রে, যে বৃদ্ধ সারারাত কেপেঁছে শীতে কম্বল পায়নি বলে,
যে নগর নটির রাত কেটেছে, হাত বদলে নতুন হাতে,
সেও বলছে শুভ নববর্ষ ।
এই সুমন শোন, “কিছু প্রশ্ন আছে? আছে কি জবাব তোর কাছে?”।
তোর মনে আছে, বন্ধুরা সবাই অপেক্ষা করতো ক্যান্টিনে?
পোকা মটরের ঘুনি, লেরো বিস্কুট আর লিকার চা, ছিল অমৃত,
আজ যখন পাঁচতারায় চা খেতে যাস, সেখানেও কি পাবি সেই আস্বাদ ?
যখন নেতা , মন্ত্রী বা অভিনেতা হেসে বলে “কেমন আছেন?”,
সেই প্রশ্নে কি খুঁজে পাস বন্ধুদের আদরের গাঁট্টার পরশ ?
ভালো থাকার অভিনয়ের আড়ালে কেন কাঁদেরে মানুষের মন?
তুই কি জানিস ভালো থাকার অভিনয় একটা রোগ, বড় ছোঁয়াচে।
ভালো না থেকেও ভালো আছি, এটাই প্রমান করার লড়াইয়ের নামই কি জীবন?
অফিসের ইঁদুর দৌড়ে বা আত্মীয় পরিজনের কুটিল রাজনীতিতে,
বন্ধু বেশি শত্রুদের ভিড়ে, ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে জীবন, তুই কি টের পাচ্ছিস সুমন?
অতিমানুষের সাফল্য বা নেই মানুষের কান্না দুটোই যখন সমান হয়ে যায়,
মরার আগেই যখন মৃত্যু গ্রাস করে সমাজকে, তখনও এমন নীরব থাকবি ?
শিক্ষার থেকে সার্টিফিকেটের অ্যালবাম বেশি আকর্ষণীয়,
জ্ঞানের বিকাশ ছাড়াই, সমাজের বিকাশ যেন সোনার পাথর বাটি,
শিশুদের মস্তিষ্ক কি এখন শুধুই নেতাদের চাষের জমি?
এই সুমন শোন, “কিছু প্রশ্ন আছে? আছে কি জবাব তোর কাছে?”।
মৃত্যুর মিছিলেও উৎসব হয়না শেষ, উদাসী হাওয়ায় জীবন যায় ভেসে,
নতুন বছরের পার্টির রসদ যোগাবে পেশেন্ট পার্টির রক্ত বেচা টাকায় ।
তবু বলবো এই আছি বেশ !!
মায়ের মমতা কি দেনা পাওনার জমাখরচের খেরোর খাতা হয়ে যাচ্ছে?
বাবার স্নেহ আজ রোজগারের সাথে শেয়ার বাজারের সূচক হয়ে যাচ্ছে কি ?
অর্থের আর সম্পদের বিনিময়ে সাংসারিক প্রেম, সেও কি এক বেশ্যা বৃত্তি নয়?
মন্দিরের লাইনেও ভিআইপি আর সাধারণ শ্রেণী ভাগ হয়!
দেবতাও কি নৈবেদ্যের আকারে আশীর্বাদ দেয়?
এই সুমন শোন, “কিছু প্রশ্ন আছে? আছে কি জবাব তোর কাছে?”।
এখনো কি সূর্য ওঠা দেখে, ভোরের পাখির গান শুনে আনন্দ পাস্ ?
কিংবা টিনের চালে প্রথম বৃষ্টির গান, মাটির সোঁদা গন্ধ,
রবিববার মাংসের ঝোল আর আলু নিয়ে মায়ের কাছে আবদার,
সেই স্বাদ কি পাস্ হোটেলের পাঁচতারার কিচেনে?
বাবার হাত ধরে ময়দানে দেখা শ্যাম থাপার বাইসাইকেল কিকে গোল,
পাস্ কি সেই আনন্দ ক্যাসিনোর রুলেটের বলে?
দার্জিলিঙের ম্যালের প্রথম সেই ট্যাটু চড়ার আনন্দ কি পেলি আর কোথাও?
কত মানুষ তো এলো জীবনে, কিন্তু স্কুল কলেজের সেই বদমাইশ গুলো কে,
কেন মিস করিস প্রতিমুহূর্তে?
আসলে জীবনে শৈশব আর কৈশোরের দিন গুলোকেই মানুষ আঁকড়ে বাঁচে অন্তরে।
জীবন থেকে জীবন ছুটি নেয়, কিন্তু সেই বন্ধুদের ছুটি নেই সারা জীবনে।
নতুন বছরে, ভালো থাকিস সবাই, এই প্রার্থণা করি অন্তরে,
এমনকি শত্রু যারা আছো তারাও ভালো থেকো,
তোমাদের শত্রুতার কষ্টি পাথরই তো,
আমার বন্ধুদের চিনিয়ে দেয় বারে বারে, খাঁটি সোনা বলে ।
নতুন বছর নতুন আশা আর চিরকালীন ভরসা,
বন্ধুরা পাশে আছে কিসের শঙ্কা।