দশগ্রামের রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ ছাত্র শিক্ষকের ভালোবাসায় অক্ষয় হলো সারাদেশে
সুমন মুন্সী ,কলকাতা
শিক্ষক ঘেরাও যদি সমাজের লজ্জা হয় তবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছেন আর আজ এক আরেক ঘেরাও এর কথা বলবো যে ঘেরাও হতে সব শিক্ষক রোজ রাজি থাকবেন ভালোবাসার শ্রদ্ধার আর আবেগের গুরুপ্রণাম সে ঘেরাও । প্রতি স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক আর ছাত্র ভোরে উঠুক আবার বীরসিংহের সিংহ জেগে উঠুক বাংলার ঘরে ঘরে। আমারদের প্রণাম স্কুলের প্রধান শিক্ষক নরেশ বাবুকে।
অরূপ মিত্র এক অনবদ্য নতুন প্রজন্মের শিক্ষক| নেশা দেশ কে চেনা, মানুষ তৈরী করা। তাঁর ফেইসবুক পেজ যে কাহিনী তুলে দিলো তা থেকে একটা কথাই বলা যায় আজও বাংলা মরেনি শত রাজনৌতিক ষড়যন্ত্রের পরেও সোনার শিক্ষক আর তাদের প্রাণের ছাত্রছাত্রীরা নতুন দেশ গোড়ার জন্য তৈরী । ভাতৃপ্রতিম অরূপ মিত্র কে অনুরোধ করা মাত্র দেশের মানুষের জন্য ছবি ও লেখা টি দিলেন, কি সেই খবর আসুন দেখি অরূপ বাবুর নিজের কলামে :
ছবিগুলো বাধ্য হয়েই পোস্ট করলাম বললেন অরূপ বাবু ।
কারন _ আর হ্যাঁ লেখাটা গল্পের মতো হলেও সত্যি ঘটনা পাঁশকুড়ার চাঁপাডালির সত্য কাহিনী।
খবর করতে গিয়ে এক বিস্ময়কর ঘটনার সম্মুখীন হলাম আজ।।
নিজেদের ব্যক্তিগত কারনে অনেক শিক্ষকরা নিজেদের বাড়ির কাছে পোস্টিং নিতে চায়। সেক্ষেত্রে এখানেও একই ভাবে নিজের স্কুল পরিবর্তন করে নিজের বাড়ির কাছে সবং এর দশগ্রামের রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ স্কুলে শিক্ষকতা করতে চেয়ে আবেদন করলে তাঁর আবেদন মঞ্জুর ও করা হয়ে গেলে তিনি পাঁশকুড়ার চাঁপাডালি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে বুঝে উঠতে পারেননি তাঁর সন্তান সম ছাত্রছাত্রীরা এভাবে তাকে ভালোবেসে আগলে রাখবে। আবেগ প্রবন ভালোবাসার দেওয়াল তুলে তাঁর যাওয়ার পথ আটকে দেবে।
শুধু তাই নয় প্রধান শিক্ষকের চলে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই তিন দিন ধরে শিক্ষককে কিভাবে স্কুলের চার দেওয়ালে আটকে রাখা যায় তাঁর প্রচেষ্টাও কম করেনি ছাত্রছাত্রীরা।
নিজেরাই পৌরসভার চেয়ারম্যান এর কাছে গিয়ে শিক্ষকের বদলির আবেদন খারিজ করে পুনরায় চাঁপাডালি স্কুলে শিক্ষকতা করার দাবিতে একটা লিখিত আবেদন করে। তাতেও কোনো কাজ না হলে বাধ্য হয়েই সমস্ত ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করে প্রধান শিক্ষকের অফিসের সামনে বসে পড়ে। এ পর্যন্ত শেষ নয় এমনকি ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে গুলো মিডডেমিলের খাওয়ার পর্যন্ত বয়কট করে একপ্রকার অনশন শুরু করে। আর সব থেকে বড় কথা সমস্ত ছাত্রীরা শিক্ষকের পায়ে পড়ে অঝোর নয়নে কান্নাকাটি করতে থাকে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের কষ্টের কান্না যেন থামছেই না। তাঁদের এই আবেগ প্রবন ভালোবাসা দেখে প্রধান শিক্ষকের চোখে জল আসে , যদিও তিনি নিজে থেকে সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু শুনছে কে ?
শনিবার হাফ টিফিনে ছুটি থাকলেও ভুলে গিয়েছে ছুটির ঘন্টা। ক্লাসের মধ্যে রইল পড়ে পড়ার ব্যাগ , রইল মিড ডে মিলের খাওয়ার । আমরা স্যারকে যেতে দেব না আমাদের স্কুল থেকে এই ছিল তাঁদের পণ। তাঁদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নরেশ বাবুকেই চাই। উনি চলে গেলে আমাদের পিতৃস্নেহে এমন ভালোবাসা,স্নেহ আর কেউ দেবে না , তাই আমরা ছাড়ব না স্যারকে এটাই ছিল তাঁদের পণ।
ছাত্র-ছাত্রীদের নাছোড়বান্দা দেখে তিনি এক দুদিন সময় নিয়েছেন , চেষ্টা করছেন ১২বছর কাটিয়ে দেওয়া ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করার।
তবে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারাও বিদায় দিতে চাইছেন না এমন প্রধান শিক্ষককে।।
আমি আমার ব্যক্তিগত মতে বলব আপনি থাকুন স্যার। থাকুন আপনার সন্তান সমূহ ছাত্রছাত্রীদের কাছে। যারা চায় আপনার বাকি অবসর জীবন পর্যন্ত ওই স্কুলেই কাটিয়ে দিন।
অনেক দেখেছি এমন দেখিনি কখনও, এমনকি অবাক করা বিষয় হল_ ওই বিষয়ে খবর করতে গেলে ছবি তোলার পর দাঁড়িয়েছিলাম হঠাৎ কয়েকজন মেয়ে আমার সামনে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে বলল আপনি কিছু করুন, আপনি আমাদের স্যারকে আটকান, আপনারা পারবেন আমাদের স্যারকে আটকাতে,প্লীজ।
সত্যিই আমি সেই মুহূর্তে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম, কিভাবে তাঁদের সান্ত্বনা দেব খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
স্যার আপনি থাকুন
তথ্য টি আমি সাংবাদিক অরুণাভ মান্না র কাছে থেকে পেয়েছি।
আইবিজি নিউজ মানুষের কথা বলতে ভালোবাসে দেশ গড়তে ভালোবাসে আপনাদের এমনই দেশের কথা জানাতে মেইল করুন [email protected]