২০২৪ লোকসভা ভোটের আগাম পূর্বাভাস ও কালনেমীর লঙ্কা ভাগ
সুনন্দ মিত্র
সাংবাদিকঃ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী
এই লেখাটা সম্পূর্ণই রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর ভর করে লেখা। রাজনৈতিক পূর্বাভাসের ইঙ্গিত বা বিশ্লেষণও বলতে পারেন।
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট তারপরই লোকসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে। দেশের ভার কাদের ওপর বর্তাবে তারই একটা আগাম পর্যালোচনা।
শুরু করার আগেই জানিয়ে রাখছি পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল কিন্তু কোনভাবেই লোকসভা ভোটের ওপর কোনরকম ছাপ ফেলবেনা। কারণ পঞ্চায়েত ভোট একেবারেই সাংবিধানিক স্তরের প্রথম পর্যায়। তবে আজ পঞ্চায়েত নয়, লোকসভা ভোটের নিরিখেই বিশ্লেষণ করবো।
যার ওপর ভিত্তি করে এই বিশ্লেষণ সেই সেফোলজিকেই যদি এই বিশ্লেষণের মানদণ্ড ধরি তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে হয় আগামী ২০২৪এর লোকসভা ভোটে বামেদের ভাঁড়ার এই বাংলায় যথারীতি শূন্যই থাকবে। কারণ ভোট পার্সেন্টেজ। যদি স্বতস্ফূর্ত জোটও হয় কংগ্রেসের সাথে তাতেও কোন লাভ হবেনা। কিন্তু কংগ্রেস ২/৩ তে সিট পাবে কারণ কংগ্রেসের জেলাভিত্তিক কিছু পকেট ভোট আছে সাথে যোগ হবে বামেদের ৩%-৫% ভোট।
সারা পশ্চিবঙ্গে বামেদের ভোট পার্সেন্টেজ কিন্তু সব জায়গায় গড়পড়তা একই। আর কংগ্রেসের কিন্তু percentage of vote 7% হলেও, কিছু জায়গায় জেলা ভিত্তিক পকেট ভোট যেমন মালদা মুর্শিদাবাদ বহরমপুর এইসব জায়গায় প্রায় ৩৩% থেকে ৪০%। সাথে যোগ হবে জোট সঙ্গীর গড়পড়তা ভোট পার্সেন্টেজ। কিন্তু বামেরা এই সুবিধা পাবে না। কারণ বিগত ভোট গুলোতে দেখা গেছে কংগ্রেস তার জোটসঙ্গীদের পূর্ন সহযোগিতা পেলেও জোটসঙ্গীকে নূন্যতম জায়গা তারা ছাড়ে না। কারণ কংগ্রেস হলো ব্যক্তি তান্ত্রিক দল। তারা তাদের এই অনুরাগী ভিত্তিক এলাকার দখল অন্য কারওকে ছেড়ে দিতে চায়না, তারফলে তাৎক্ষণিক কোন ঘটনার প্রভাব যদিও পড়ে তাহলেও সেই ভোট পার্সেন্টেজ অধিক থেকে অধিকতর হলেও ২০-৩০%এর বেশি হবে বলে মনে হয় না।
তাহলে এখন প্রশ্ন বামেরা হঠাৎ কেন এতটা উজ্জীবিত হয়ে বার্তা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে। এটাকে বলে গোয়েবেলিও তত্ব। হয়কে নয় করা। কিছু ভাড়া করা সাংবাদিক আর ততোধিক বিরক্তিকর প্রবক্তার ওপর নির্ভর করে হৃত সন্মান পুনরুদ্ধারের দিবা স্বপ্ন। এরফলে যদি ২/১% ভোট বারেও তাতেও কিন্তু কোন আসন জেতা সম্ভব নয়।
এবার আসি ruling partyতে ঘটনা পরম্পরায় এইমুহুর্তে তাদের অবস্থা কিছুটা কোণঠাসা। তারপর এটা লোকসভা ভোট। স্বাভাবিক ভাবে কেন্দ্রীয় দলের পাল্লা একটু ভারীই থাকে। ২০১৯এ পশ্চিমবঙ্গে আঞ্চলিক দল হিসাবে প্রবল tmc হাওয়া থাকলেও বিজেপি ৪০’১৭% ভোট পেয়ে ১৮টা আসনে জয়ী হয়েছিল। Tmc দলটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘু ভোটের ওপর নির্ভরশীল। সংখ্যালঘু ভোট কিন্তু গড়পড়তা সব জায়গায় ৩০% নয়। কোথাও ৮০-৯০% তো কোথাও আবার ১০%এর নিচে। তারপর সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক ইতিমধ্যেই একটা বার্তা দিয়েছে সাগরদিঘিতে। যদিও সেটা সম্ভব হয়েছে জোট প্রার্থী হিসাবে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়ায়। এই বিষয় মাথায় রেখে যদি হিসাব করা হয়, তাহলে রুলিং পার্টির ভোট পার্সেন্টেজ একটু হলেও কমবে।
শেষে আসি বিজেপিতে সবদিক বিচার করলে এইমুহুর্তে বিজেপি অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। বিধানসভায় ভোট পার্সেন্টেজ একটু কমলেও লোকসভায় কিন্তু বিজেপির পাল্লাই ভারি। তাই সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটি, আর বিজেপি যদি অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক ক্ষেত্রে শক্ত হাতে হাল ধরতে পারে, তবে আগামী ২০২৪এর লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে বিজেপির ঝুলিতে ২০-২ ৫টা আসন আসতেই পারে। তাছাড়া মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আশীর্বাদ’তো আছেই।
তবে এই ভোট পর্যালোচনা ক্ষেত্রে আমি নিতান্তই শিশু, অনেক বড়বড় বিশেষ-অজ্ঞ সেফোলোজিস্ট এবং ভালো প্রবক্তা আছে যারা চা তেলেভাজা সহযোগে চাটুকারিতার নিদর্শন স্বরূপ আরও ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
তবে শেষ করার আগে এটা অবশ্যই জোর দিয়ে বলতে পারি বামেদের ভাড়ার কিন্তু শূন্যই থাকবে। এটা কোন রাগ বিদ্বেষ বা বৈরিতার কথা নয়। অংক।
অংকের সাথে আসে সংখ্যাতত্ত্ব আর আসে প্রোবাবিলিটি, যদি হঠাৎ দেখা যায় টিমেসি সকলেই অনৈতিকতার সাথে যুক্ত এবং আদালতে প্রমাণিত তবে জনরোষ অন্য দিকে পড়তে বাধ্য। আবার যদি দেখা যায় সব অভিযোগই ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশপ্রণীত তবে জনতা উল্টো ধোলাই দেবে টিএমসিটিএমসি বিরোধী দের। এইসব কথা মাথায় রেখেও বলা যায় বাংলায় প্রথম দুটি দল বিজেপি আর টিমেসি ই থাকবে কংগ্রেস আর বাম জোট হিসাবে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের দিকে যাবে ভোট পরবর্তীতে যদি রাহুল গান্ধীর নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা না ওঠে, তবে কেরালায় শুরু হবে ভাঙ্গনের সূত্রপাত যা বাংলা কেও ছুঁয়ে যাবে ।